উসমানীয় তুর্কি খিলাফত হলো, ইসলামের চতুর্থ এবং শেষ প্রকৃত খিলাফত। ১২৫৮ খ্রি. বাগদাদ কেন্দ্রীক, আব্বাসীয় খিলাফতের পতনের পর, মিশরের মামলুক সুলতানদের অধীনে, কায়রো কেন্দ্রীক আব্বাসীয় খলিফারা, ১৫১৭ খ্রি. পর্যন্ত, মুসলিম বিশ্বের খলিফা হিসেবে নেতৃত্বে ছিল। এরপর উসমানীয় নবম সুলতান প্রথম সেলিমের হাতে, মামলুক সালতানাতের পতন ঘটলে, কায়রো কেন্দ্রীক আব্বাসীয় খিলাফতের চির অবসান হয় এবং উসমানীয় খিলাফতের উত্থান ঘটে। ১৫১৭ খ্রি, থেকে ১৯২৪ খ্রি. খেলাফত ব্যবস্থার পতন পর্যন্ত, উসমানীয় সুলতানরা, খলিফা হিসেবে ইসলামী বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়েছিল।
উসমানীয় তুর্কি খিলাফতের উত্থান ও পতন সম্পর্কে জানতে আর্টিক্যালটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
১২৫৮ খ্রি. ! যে বছর নৃসংশ মঙ্গোল নেতা, হালাকো খানের আক্রমণে, বাগদাদের আব্বাসীয় খিলাফতের পতন ঘটে, সে বছর তুর্কি আনাতোলিয়ার ক্ষুদ্র শহর সগুতে, কায়ী বসতির প্রধান আর্তুগুল গাজীর ঘরে, জন্মগ্রহণ করে একটি ফুটফুটে শিশু। শিশুটির নামকরণ করা হয় উসমান নামে। হয়তো মঙ্গোল আক্রমণের ফলে, পতন উম্মুখ মুসলিম জাতীর নেতৃত্ব দেওয়ার লক্ষ্যেই, সৃষ্টিকর্তা ঐ বছরেই তাকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন।
আরও পড়ুন: রুমের সেলজুক সালতানাতের ইতিহাস
তার জন্মের প্রায় অর্ধশত বছর পর, ১৩০০ খ্রি, তুর্কি আনাতোলিয়ার রুমের সেলজুক সালতানাতের ধ্বংস স্তূপের উপর, তিনি একটি ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। যা তার নাম অনুসারে উসমানীয় সালতানাত বা অটোমান সাম্রাজ্য নামে পরচিতি লাভ করে। উসমান গাজীর প্রতিষ্ঠিত সাম্রাজ্য, ১৯২৩ খ্রি. পতন পর্যন্ত, ৩৬ জন সুলতান দীর্ঘ প্রায় ৬৫০ বছর ধরে রাজত্ব করে। প্রথম উসমানীয় সুলতান উসমান গাজী, ১৩২৬ খ্রি, মৃত্যু বরণ করলে, তার প্রতিষ্ঠিত ক্ষুদ্র রাজ্যটিকে, একটি সাম্রাজ্যে পরিণত করেন, তার সুযোগ্য পুত্র দ্বিতীয় উসমানীয় সুলতান অরখান। ১৩৫৯ খ্রি. সুলতান অরখানের মৃত্যুর পর থেকে ১৫১২ খ্রি. পর্যন্ত, ছয় জন উসমানীয় সুলতান রাজত্ব করে।
![]() |
সুলতান ওসমান গাজী |
উসমানীয় সপ্তম সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ ছিলেন, শ্রেষ্ঠ উসমানীয় সুলতান। তিনি ১৪৫০ খ্রি. বায়জান্টাইন রাজধানী এবং মহানবী (স) এর ভবিষ্যৎবানী করা, ঐতিহাসিক শহর কনস্টান্টিনোপল বিজয় করেন। কনস্টান্টিনোপলের নতুন নামকরণ করেন ইস্তাম্বুল নামে। এই ইস্তাম্বুল হয়ে উঠে উসমানী সাম্রাজ্যের নতুন রাজধানী। তাছাড়া তার শাসনামলে উসমানীয় সাম্রাজ্য, ইউরোপে সর্বাধিক বিস্তার লাভ করে। তাই তাকে ইতিহাসে বিজয়ী মোহাম্মদ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
যাই হোক, ১৫১২ খ্রি. উসমানীয় সাম্রাজ্যের সিংহাসনে আরোহণ করেন, নবম উসমানীয় সুলতান প্রথম সেলিম। সুলতান সেলিম ১৫১৬ খ্রি. সংঘটিত হওয়া, মারজ ই দাবিকের যুদ্ধে শেষ মামলুক সুলতান খানসু ঘুরীকে পরাজিত করে, মিশরের মামলুক সালতানাতের পতন ঘটান। মামলুক সালতানাতের পতনের পর, একদিকে মক্কা, মদীনা, জেরুজালেম, সিরিয়া, ইরাক সহ সমগ্র আরব দেশ এবং মিশর ও উত্তর আফ্রিকা, উসমানী সালতানাতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে। অন্যদিকে ১৫১৭ খ্রি. কায়রু কেন্দ্রীক, শেষ আব্বাসীয় খলিফা তৃতীয় মুতাওয়াক্কিল, উসমানীয় সুলতান সেলিমের নিকট, ইসলামের খেলাফতের দায়িত্ব স্তানান্তর করেন।
আরও পড়ুন:আব্বাসীয় খিলাফতের ইতিহাস
এর মাধ্যমে আরব আব্বাসীয় খিলাফতের চির অবসান ঘটে এবং ইস্তাম্বুল কেন্দ্রীক, তুর্কি উসমানীয় খেলাফতের যাত্রা শুরু হয়। ১৫১৭ খ্রি, সুলতান সেলিমের খেলাফত লাভের পর থেকে, ১৯২৪ খ্রি. আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা, মোস্তফা কামাল পাশার নেতৃত্বে ,ইসলামী খেলাফতের পতন ঘটানো পর্যন্ত, মোট ২৯ জন উসমানীয় সুলতান, ইসলামী খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। আরবের কয়েকটি মুসলিম রাজবংশ ব্যতিত, সমগ্র মুসলিম বিশ্ব খলিফা হিসেবে, তাদেরকে স্বীকৃতি দিয়েছিল এবং সম্মান করত।
![]() |
খলিফা সুলতান সেলিম |
১৫২০ খ্রি. উসমানীয় নবম সুলতান এবং প্রথম তুর্কি খলিফা, সেলিমের মৃত্যুর পর, তার পুত্র সুলায়মান সিংহাসনে আরোহণ করেন। তার শাসনকাল ছিল উসমানীয় সাম্রাজ্য কিংবা খেলাফতের স্বর্ণযুগ। এ সময় উসমানীয় সাম্রাজ্য এশিয়া, ইউরোপ এবং আফ্রিকায় বিস্তার লাভ করে। রাজ্য বিজয়, শিক্ষা-স্থাপত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং শাসন সংষ্কারের অবদান রাখার কারণে, তাকে সুলায়মান দ্যা গ্রেড বা মহামতি সুলায়মান বলে অভিহিত করা হয়।
তার সময়ে ইউরোপের কোন রাজা কিংবা প্রজা, ইসলাম ও মহানবী (স) কে নিয়ে, কটূক্তি করার সাহস পেত না। তার ভয়ে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন, রাশিয়া, ইতালি কিংবা জার্মানির সম্রাটরা থরথর করে কাঁপতো। ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে, তাকে হযরত ওমর (রা) এর পর, অন্যতম শ্রেষ্ঠ শক্তিশালী খলিফা হিসেবেও বিবেচিত করা যায়। সুলতান সুলায়মানের কর্তৃক বিজিত উসমানীয় সাম্রাজ্য, বর্তমান বিশ্বে ৫০ টি স্বাধীন রাষ্ট্রের রূপ ধারণ করে আছে। তবে ১৫৬৬ খ্রি. সুলতান সুলায়মানের মৃত্যুর পর, উসমানীয় সাম্রাজ্য পতনের দিকে ধাবিত হয়।
এরপর অল্প কয়েকজন উসমানীয় সুলতান ব্যতিত, অন্যান্য সুলতানরা নতুন রাজ্য বিজয়ে সফলতা দেখাতে সক্ষম হননি। বরং বিজিত রাজ্য সমূহ রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। অন্যদিকে উসমানীয়দের দুর্বলতার সুযোগে, ইউরোপিয় শক্তি বিশেষ করে ব্রিটিশ, রুশ, ফরাসী, জার্মান এবং অস্ট্রিয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি হতে তাকে। একটা সময় উসমানীয় সাম্রাজ্য, এই ইউরোপীয় শক্তি সমূহের কাছে পরাজিত হতে থাকে। একই ভাবে উসমানীয় সুলতান কিংবা খলিফাদের, ক্ষমতা ও শক্তি বিলুপ্ত হতে থাকে। এভাবে যুগের পর যুগ চলতে থাকে, শতাব্দী ফেরিয়ে নতুন শতাব্দীর আগমন ঘটে।
অবশেষে উসমানীয়দের পতনের যুগে, ধুমকেতু হিসেবে আবির্ভাব ঘটে, ৩৪ তম উসমানীয় সুলতান ও খলিফা দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের। তিনি ১৮৭৬ খ্রি. ইস্তাম্বুলের সিংহাসনে আরোহণ করেন। সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ, একজন ধর্মপরায়ণ এবং নিষ্ঠাবান শাসক ছিলেন। তিনি ইসলামী বিশ্বের ভ্রাতৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে, আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। একজন খলিফা হিসেবে তিনিও, বিশ্বের মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট ছিলেন। এ সময় সমগ্র মুসলিম বিশ্বে, ইউরোপীয় খ্রিস্টান সাম্রাজ্য সমূহের উপনিবেশ প্রতিষ্টিত হয়।
![]() |
খলিফা সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ |
সিপাহী বিপ্লবের পর ভারতবর্ষেও ব্রিটিশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। উত্তর আফ্রিকা, মিশর, পারস্য কিংবা আরব, ইউরোপীয়দের সাম্রাজ্য বিস্তারের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। এক কথায় মুসলিম জাতি, এমন দুর্দিন দেখেছিল সর্বশেষ ত্রয়োদশ শতকে, মঙ্গোল আক্রমণের সময়। ঠিক এমন সময়, সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ, সর্বোচ্চ চেষ্টা করে গেছেন ইসলামী খিলাফতের মর্যদা এবং ফিলিস্তিন সহ সমগ্র বিশ্বের, মুসলিম জাতীকে রক্ষার জন্য। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, পাশ্চাত্য শিক্ষা-সংষ্কৃতিতে প্রভাবিত, বিপথগামী নব্য তুর্কি বাহিনীর আন্দোলনের ফলে, ১৯০৯ খ্রি. সিংহানচ্যুত হন ইসলামের সর্বশেষ প্রকৃত ও শেষ খলিফা, সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ। তার পতনে মূলত উসামনীয় সাম্রাজ্যেরও, পতন ডেকে নিয়ে আসে। এরপর উসমানীয় সুলতান হিসেবে ক্ষমতায় আসে পঞ্চম মুহাম্মদ। তিনি ১৯০৯ খ্রি. থেকে ১৯১৮ খ্রি, পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন।
আরও পড়ুন:উসমানীয় সাম্রাজ্যের ইতিহাস
তার শাসনকালে ১৯১৪ খ্রি. সংঘটিত হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। এ যুদ্ধে অক্ষ শক্তির সাথে যোগদান করে উসমানীয়রা। ফলে মিত্র শক্তির বিজয়ের পর, সমগ্র উসমানীয় সাম্রাজ্য মিত্র শক্তি বিশেষ করে, ব্রিটিশ এবং ফরাসী সাম্রাজ্যভুক্ত হয়ে পড়ে। অন্যদিকে উসমানীয় সুলতান ও খলিফা পঞ্চম মুহাম্মদ, মিত্র শক্তির হাতে বন্দী হন। এরপর তাকে নামমাত্র ক্ষমতায় রেখে, প্রকৃতপক্ষে মিত্রশক্তির সেনা বাহিনীরা, উসমানীয় সাম্রাজ্যের উপর প্রভাব বিস্তার করে।
১৮১৮ খ্রি, পঞ্চম মুহাম্মদের মৃত্যুর পর, তার ভাই ষষ্ঠ মুহাম্মদ ইস্তুাম্বুলের সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি ছিলেন সর্বশেষ উসমানীয় সুলতান। তিনিও মিত্র শক্তির কাছে, ক্রিড়ানক সুলতান হিসেবে ক্ষমতায় ছিলেন। তার শাসনামলে মিত্র শক্তির বাহিনী, নিরীহ তুর্কিদের উপরে অযাথা নির্যাতন ও অত্যাচার চালায় এবং অনেককে বন্দী ও নির্বাসিত করে। এ সময় তিন মহাদেশ বিস্তৃত উসমানীয় সাম্রাজ্য, রাজধানী ইস্তাম্বৃুল কেন্দ্রীক ক্ষুদ্র সাম্রাজ্যের পরিণত হয়। মিশর, উত্তর আফ্রিকা, আরব বিশ্ব, কিংবা ইউরোপ হয়তু, ব্রিটিশ-ফরাসী সাম্রাজ্যভুক্ত হয়ে পড়ে, না হয় স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়। তবে প্রথম মহাযুদ্ধে, উসমানীয়দের পরাজয়ের ফলে, সবচেয়ে দুরবস্থায় পড়ে মুসলিম শাসিত দেশ সমূহ। এর মধ্যে ফিলিস্তিনের মুসলমানদের জীবনে, সবচেয়ে বেশী ভাগ্য বিপরযয় নেমে আসে।
![]() |
উপনেবেশিক বিভক্তি ম্যাপ |
ফিলিস্তিনে ব্রিটিশ ম্যান্ডটরি শাসনামলে, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইহুদিরা, ব্রিটিশদের সহযোগিতায় ফিলিস্তিনে সমবেত হতে থাকে। পরবর্তীতে তার ফিলিস্তিনের মুসলামনদের সেখান থেকে উচ্ছেদ করে, স্বাধীন অবৈধ ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে! এর পরের ইতিহাস কিংবা কাহিনী আমরা প্রতিদিনই পাই পত্রিকার পাতায় কিংবা টেলিভিশনের খবরে। যাই হোক, উসমানীয় সালতানাত কিংবা তুর্কি জাতির এমন দুর্দিনে এগিয়ে এলেন, পাশ্চাত্য সংষ্কৃতি ও শিক্ষায় শিক্ষিত, ধর্মনিরপেক্ষবাদী এবং উসমানীয় সম্রাজ্য কিংবা খেলাফত বিরোধী, বিশ্বযুদ্ধে যুদ্ধরত তুর্কি বাহিনীর আরব ফ্রন্টে , অন্যতম সেনাপতি মোস্তাফা কামাল পাশা।
তিনি ইসলামী খেলাফতকে রক্ষার পরিবর্তে, নিজের দেশের সম্মান ও মর্যদা রক্ষা করার জন্য, দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হলেন। তিনি মিত্রশক্তির ক্রিড়ানকে পরিণত হওয়া, উসমানীয় সুলতানের বিরোধীতা করে, ১৯১৯ খ্রি. ১৯ শে জুলাই আনাতোলিয়ার আমাশিয়াতে, জাতীয়তাবাদী নেতাদের সাথে, আধুনিক তুর্কি রাষ্ট্রের প্রথম শাসনতান্ত্রিক খসড়াপত্রে স্বাক্ষর করেন। এরপর কামাল পাশার নেতৃত্বে, আধুনিক তুরস্কের স্বাধনিতা যুদ্ধের সূচনা হয়। ১৯২০ খ্রি. এপ্রিলে আঙ্গোরাতে, তিনি একটি নতুন জাতীয়তাবদী সরকার গঠন করেন। উসমানীয় সুলতান এবং মিত্রশক্তি বিরোধী তুর্কিরা, তার দলে যোগদান করতে থাকে।
অতঃপর তিনি শক্তিশালী তুর্কি বাহিনী গঠন করে, উসমানীয়দের হারানো শহর গুলো, পুনরুদ্ধার করেন। প্রায় ৮ লক্ষ বর্গ কি.মিটার আয়তনের বর্তমান তুরস্ক, মূলত তার প্রচেষ্টায় গড়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিল। না হয় হয়তো তুরস্ক আজ, ইস্তাম্বুলের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ত। যাই হোক, মুস্তাফা কামাল পাশা আধুনিক তুর্কি জাতির জন্য, যে অবদান রেখে গেছেন, তার জন্য একদিকে তাকে তুর্কি জাতির পিতা বলা হয়।
অন্যদিকে উসমানীয় সালতানাত কিংবা খেলাফতের পতন ঘটিয়ে, তিনি বিশ্বের অধিকাংশ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে, ঘৃণার পাত্র হয়ে আছেন। ১৯২২ খ্রি, তিনি সর্বশেষ উসমানীয় সুলতানকে, ইংল্যান্ডে নির্বাসিত করে ১৩০০ খ্রি, উসমান গাজীর হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হওয়া , উসমানীয় সালতানাতের পতন ঘটান। উসমানীয় সালতানাতের স্থলে, তুর্কি জাতির নাম অনুসারে তুরস্ক রাষ্ট্রের আবির্ভাব ঘটে। সালতানাতের পতনের পর, আঙ্কারাকে তুরস্কের রাজধানী ঘোষণা করা হয় এবং সেখানে জাতীয়বাদী সরকার গঠিত হয়। উক্ত সরকারের পক্ষ থেকে, পঞ্চম মুহাম্মদের চাচাত ভাই দ্বিতীয় আব্দুল মজিদকে, খলিফা হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু খলিফা শুধুমাত্র পদবীর অধিকারি ছিল, তার কোন ক্ষমতা ছিল না।
এরপর ১৯২৩ খ্রি, জুলাই মাসে, লুজান চুক্তির মাধ্যমে, মিত্র শক্তি মোস্তফা কামাল পাশার প্রতিষ্ঠিত, আধুনিক তুরস্কের সীমান এবং সরকারকে স্বীকৃতি প্রদান করে। অক্টোবরে তুরস্ককে প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়
![]() |
ইসলামের শেষ খলিফা দ্বিতীয় আব্দুল মজিদ |
এবং মুস্তাফা কামাল পাশা প্রজাতন্ত্রের প্রথম সভাপতি বা প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। অতঃপর ১৯২৪ খ্রি. ৩ মার্চ, তিনি অপর একটি আইন পাশ করে, উসমানীয় খেলাফতের উচ্ছেদ সাধন করেন এবং উসমানী ও ইসলামের শেষ খলিফা, দ্বিতীয় আব্দুল মজিদকে স্বপরিবারে, ফ্রান্সে নির্বাসিত করেন। ইসলামের শেষ খলিফা দ্বিতীয় আব্দুল মজিদ, ১৯৪৪ খ্রি, প্যারিসে মৃত্যু বরণ করেন। পরবর্তীতে তাকে সৌদি আরবের মদিনায়, জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়। এই জান্নাতুল বাকিতে শায়িত আছেন, ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ ও শেষ নবী মুহাম্মদ (স) সহ অসংখ্য সাহাবাগণ। এভাবে মোস্তফা কামাল পাশা কর্তৃক, উসমানীয় খেলাফতের পতনের মাধ্যমে, ৬৩২ খ্রি, আবু বকর (রা) এর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত, দীর্ঘ ১৩০০ বছরের ইসলামী খেলাফত ব্যবস্থার অবসান হয়। খেলাফতের পতনের পর মুসলিম জাতীর ঐক্য চিরতরে বিনিষ্ট হয় এবং মুসলিম বিশ্ব নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ে।
ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থার পতনের পর, মুসলিম বিশ্বের কি কি ক্ষতি হলো?
বর্তমান বিশ্বেও কি, ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা কিংবা খলিফাদের প্রয়োজন আছে?
আপনাদের মতামত কমেন্টে জানাতে পারেন।
তথ্যসূত্রে :
📘 উসমানী সাম্রাজ্যের ইতিহাস - ড. আলী মুহাম্মদ সল্লবি
📘 অটোমানদের ইতিহাস - মাহবুবুর রহমান
📘 তুরস্কের ইতিহাস - আবদুল কাদের
📘 মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস (অটোমান সাম্রাজ্য থেকে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা রাষ্ট্র) - এ.বি.এম হোসেন
📘 দ্যা অটোমান সেঞ্চুরি - লর্ড কিনরস (বাংলা অনুবাদ- জেসী মেরী কুইয়া)
📘 The Turkish Empire - Lord Eversley
📘 History of the Ottoman Turks - S. Creasy Edwards
📘 উইকিপিড়িয়া, এনসাইক্লোপিডিয়া এবং বিভিন্ন ব্লগ ও অনলাইস ওয়েব সাইট
কী-ওয়ার্ড:
উসমানীয় খিলাফতের ইতিহাস
উসমানীয় সাম্রাজ্যের ইতিহাস
উসমানীয় সাম্রাজ্যের উত্থান
উসমানীয় খেলাফতের উত্থান
উসমানীয় খেলাফতের পতন
ইসলামী খিলাফতের পতন
উসমানীয় খিলাফতের উত্থান ও পতন
উসমানীয় সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতন
0 মন্তব্যসমূহ