আব্বাসীয় খলিফাদের বংশ তালিকা এবং শাসনাকল (৯৪৪-১০৫৫খ্রি.)। বুয়াইয়া রাজবংশের অধিনে আব্বাসীয় খেলাফত। Family tree of Abbasid Caliph 944-1055 AD.
আব্বাসীয় খলিফাদের বংশ তালিকা(৯৪৪-১০৫৫খ্রি.) সম্পর্কে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও দেখতে পারেন, লিংক:আব্বাসীয় খলিফাদের বংশ তালিকা (৯৪৪-১০৫৫খ্রি.)
৯৪৪ খ্রি. বাগদাদের সিংহাসনে উপবিষ্ট ছিলেন, আব্বাসি খলিফা মুসতাকফী বিল্লাহ।তিনি ছিলেন দুর্বল, ক্ষমতাহীন এবং নামমাত্র খলিফা। কেননা এ সময় আব্বাসী খেলাফতের, প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী ছিল, তুর্কি দেহরক্ষী বাহিনীর প্রধান, খলিফার আমিরুল উমরা ইবনে শীরযাদ। এই সময় থেকে আব্বাসীয় খিলাফত, শুধুমাত্র বাগদাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। সমগ্র ইসলামী সাম্রাজ্য জুড়ে তখন, অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্য গড়ে উঠে। শিয়া মতলম্বি বুয়াইয়া সাম্রাজ্য ছিল রাজ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি।
আরও পড়ুন:
*রাশেদীন খলিফাদের বংশ তালিকা (৬৩২-৬৬১ খ্রি.)
* উমাইয়া খলিফাদের বংশ তালিকা (৬৬১-৭৫০ খ্রি.)
*আব্বাসীয় খলিফাদের বংশ তালিকা (৭৫০-৮৪২ খ্রি.)
*আব্বাসীয় খলিফাদের বংশ তালিকা (৮৪২-৯৪৪ খ্রি.)
*আব্বাসীয় খলিফাদের বংশ তালিকা (৯৪৪-১০৫৫ খ্রি.)
ইবনে শীরযাদ ছিলে খুবই অত্যাচারি। তিনি মুসতাকফি বিল্লাহকে, ক্রিড়ানক খলিফা হিসেবে ক্ষমতায় রেখে, নিজের ইচ্ছেমত শাসনকারয পরিচালনা করতেন এবং জনসাধারণের উপর জুলুম নিরযাতন চালাতেন। অত:পর খলিফা তার অত্যচারে অতিষ্টিত হয়ে, পারস্যের ফারসের শিয়া মতলম্বি, বুয়াহিদ রাজবংশের আমীর মুইযোদ্ধৌল্লাহকে বাগদাদে আমন্ত্রণ জানান। মুইযোদ্ধৌল্লাহ ৯৪৪ খ্রি., বিশাল বাহিনী নিয়ে বাগদাদে প্রবেশ করে, তুর্কি শাসনের অবসান করেন এবং বুয়াহিদ শাসনের সূচনা করে।
খলিফা মুসতাকফি বিল্লাহ ভেবেছিলেন, তুর্কি বাহিনীর পতনের পর, তিনি আব্বাসীয় খিলাফতের প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারি হবেন এবং স্বাধীনভাবে শাসকারয পরিচালনা করবেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, আমীর মুইযোদ্ধৌল্লাহও তুর্কি আমিরুল উমরাদের মত ছিলেন। তিনিও খলিফার দুর্বলতা ও অক্ষমতার সুযোগে, বাগদাদের সর্বময় ক্ষমার অধিকারী হয়ে উঠেন। মুসতাকফিকে নামমাত্র সিংহাসনে উপবিষ্ট করে, খলিফার সকল ক্ষমতা নিজ হস্তগত করে।
![]() |
বুয়াহিদ সাম্রাজ্য |
এমনকি মুইযোদ্ধৌল্লাহ, তাকে সুলতান উপাধি দান করতে, খলিফাকে বাধ্য করে বুয়াইয়াদের এভাবে ক্ষমতা দখলের ফলে, খলিফা মুসতাকফি শঙ্কীত হয়ে পড়েন। এরপর তিনি বুয়াইয়াদের থেকে ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের জন্য প্রচেষ্টা চালান। কিন্তু এই বিষয়টি আমির মুইযোদ্ধৌল্লাহ জানতে পারলে, তিনি খলিফা মুসতাকফি বিল্লাহকে ৯৪৬ সিংহাসনচ্যুত করেন এবং তার চোখ অন্ধ করে দেন।
মুসতাকফির সিংহাসনচ্যুতির পর, আমির মুইযোদ্দৌল্লাহ ১৮ তম আব্বাসী খলিফা, মুকতাদিরে অপর পুত্র আল মু’তীয়কে, নামমাত্র খলিফা হিসেবে ঘোষাণা করেন। আল মুতির শাসনামলে, শিয়া পন্থি মুইযোদ্দৌল্লাহ বাগদাদের সুন্নি আব্বাসীয় সাম্রাজ্যে, বহু শীয়া রীতি-নীতি প্রবর্তন করেন।
১০ মহরমকে আশুরা দিবস পালনের রীতি প্রচলন করেন। তিনি সুন্নি আব্বাসীয় খলিফার পরিবর্তে, মিশর ও উত্তর আফ্রিকার ফাতেমী খলিফাদের মান্য করত। এভাবে বুয়াইয়াদের ক্রিড়ানক খলিফা হিসেবে, দীর্ঘকাল শাসনকারয পরিচালনার করার পর, ৯৭৪ খ্রি, খলিফা আল মু’তীয় মৃত্যুবরণ করেন।
আল মু’তীয়র মৃত্যুর পর, তার পুত্র আল তাই বাগদাদের সিংহাসনে আরোহণ করেন। এ সময় বুয়াইয়া শাসক ছিলেন, আমিরুল উমরা আযাদুদ্দৌল্লাহ। আযাদুদ্দৌল্লাহ উচ্চাভিলাষী ছিলেন। বুয়াইয়া বংশের রাজপুত্রকে, আব্বাসীয় সিংহসানে আরোহণ করার উদ্দেশ্যে, তিনি নিজ কন্যাকে খলিফা আল তাইয়ের সাথে বিবাহ দেন। তিনি নিজেও খলিফার এক কন্যাকে বিবাহ করে, রাজ পরিবারের সাথে আত্মীয়তার বন্ধন সুদৃঢ় করেন।
কিন্তু ৯৮৯ খ্রি, আযাদুদ্দৌল্লাহর মৃত্যুর পর, বাহাউদ্দৌল্লাহ আমীরুল উমরা হিসেবে ক্ষমতা লাভ করার পর, খলিফা আল তাইর সাথে তার দ্বন্দ দেখা দেয়। অত:পর বাহাউদ্দৌল্লাহ ৯৯১ খ্রি., আল তাইকে সিংহাসনচ্যুত করে। এরপর ২১ তম আব্বাসীয় খলিফা মুত্তাকির পুত্র, কাদির বিল্লাহকে সিংহাসনে আরোহণ করান।
খলিফা কাদির বিল্লাহর খিলাফতকালে, গজনী সাম্রাজ্যের অধিপতি সুলতন মাহমুদ, ভারতবর্ষে বিজয় অভিযান পরিচানা করেন। অন্যদিকে খোরাসানে সেলজুক বেগের নেতৃত্বে উত্থান হয় সেলজুক তুর্কিদের। তাছাড়া এ সময় বুয়াইয়া আমীররাও ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে, বিভিন্ন প্রকর আত্মকলহে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে এই আত্মকলহই তাদের পতন ডেকে নিয়ে আসে।
![]() |
সেলজুক সাম্রাজ্য |
১০৩১ খ্রি, আল কাদিরের মৃত্যুর পর, তার পুত্র আল কাইম সিংহাসনে আরোহণ করেন। প্রসঙ্গত এই বছর স্পেনের উমাইয়া উমাইয়া আমিরাত ও খেলাফতের পতন ঘটে।বুয়াইয়া রাজংবশের পতনের যুগে, পারস্যের আল রাই শহরকে কেন্দ্র করে, সেলজুক তুগ্রীল বেগের নেতৃত্বে উত্থান হয়, সেলজুক সাম্রাজ্যের। তারা মধ্য এশিয়া, পারস্য ও আফগানিস্তানে বিশাল একটি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।
আরও পড়ুন:
*স্পেনের উমাইয়া খিলাফতের ইতিহাস
সেলজুক তুর্কিরা ধর্মপ্রাণ সুন্নি মুসলিম ছিল। তারা আব্বাসীয় খলিফাকে যথেষ্ট সম্মান এবং মান্য করতো। খলিফা আল কাইমও, এমন একটি রাজ শক্তির খুজ করছিলেন, যারা বাগদাদের বুয়াইয়াদের পতন ঘটিয়ে, সুন্নি আব্বাসীয় খিলাফতের গৌরব ও প্রভাব প্রতিপত্তি ফিরিয়ে আনবেন।
আব্বাসীয় খলিফাদের এমন দুঃসময়ে, সেলজুক তুর্কিদের উত্থান ঘটে। অতপর খলিফা আল কাইম, ১০৫৫ খ্রি, সেলজুক শাসক তুঘ্রীল বেগকে, আমন্ত্রণ জানান বুয়াইয়া রাজবংশের বিরোদ্ধে। এর প্রেক্ষিতে তুঘ্রীল বেগ বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে, বাগদাদে অভিযান চালান। এই অভিযানের মাধ্যমে, শেষ বুয়াইয়া আমিরু উমরা মহিউদ্দৌলাহকে, পরাজিত ও বন্দি করে, বুয়াইয়াদের পতন ঘটান এবং বাগদাদের আব্বাসীয় খিলাফতের গৌরব ও মরযদা রক্ষা করতে সক্ষম হন।
আরও পড়ুন: আব্বাসীয় খলিফাদের বংশ তালিকা (৯৪৪-১০৫৫ খ্রি.)
✏️তথ্যের উৎস:
📘ইসলামের ইতিহাস- সৈয়দ মাহমদুল হাসান 📘ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি- সৈয়দ মাহমুদুল হাছান 📘ইসলামের ইতহিাস- মুহাম্মদ মিজানুর রশিদ 📘আরব জাতীর ইতিহাস- শেখ লুতফর রহমান 📘দ্যা লস্ট ইসলামিক হিস্ট্রি- ফিরাস আল খতিব 📘উমাইয়া খিলাফতের ইতিহাস - ড. আলী মুহাম্মদ সাল্লবী 📘 উইকিপিডিয়া, এনসাইক্লোপিডিয়া, বিভিন্ন ব্লগ এবং ওয়েবসাইট
📌কী-ওয়ার্ড:
আব্বাসীয় খলিফাদের বংশ তালিকা আব্বাসীয় খলিফাদের বংশ তালিকা ৯৪৪-১০৫৫ খ্রি. বুয়াহিদ যুগ বুয়াহিদ রাজবংশের ইতিহাস আব্বাসীয় কারা? আব্বাসীয় বংশের পরিচিতি আব্বাসীয় খলিফাদের বংশ তালিকা আব্বাসি খিলাফত আব্বাসীয় খিলাফতের ইতিহাস আব্বাসীয় খিলাফতের উত্থান ও পতন আব্বাসীয় খলিফাদের বংশ তালিকা আব্বাসীয় রাজবংশের ইতিহাস বুয়াইয়া রাজবংশ বুয়াহিয়া রাজবংশ বুয়াইয়া কারা? বুয়াহিদদের ইতিহাস
0 মন্তব্যসমূহ