মুসলিম বিজয়পূর্ব ভারতবর্ষের রাজনৈতিক অবস্থা কেমন ছিল? Indian Political System before Muslim conquest.
আরও পড়ুন: মুসলমানদের সিন্ধু বিজয়ের বীরত্বগাঁথা ইতিহাস
ভারতবর্ষে মুসলমানদের বিজয় অভিযান পরিচালিত হয় তিনটি পর্যায়ে। প্রথম পর্যায় ছিল ৭১২ থেকে ৭১৫ খ্রিস্টাব্দে। উমাইয়া খলিফা আল ওয়ালিদের পূর্বাঞ্চলিয় তথা ইরাকের শাসনকর্তা হাজ্জাজ বিন ইউসুফের ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা মুহাম্মদ বিন কাসিমের নেতৃত্বে পরিচালিত হওয়া এই যুদ্ধ অভিযানের মাধ্যমে মুসলমানরা সর্বপ্রথম ভারতবর্ষের অন্যতম প্রাদেশিক অঞ্চল সিন্ধু ও মুলতান বিজয় করে।
দ্বিতীয় পর্যায় ছিল ১০০০ থেকে ১০২৭ খ্রিস্টাব্দে। আফগানিস্তানের গজনী সাম্রাজ্যের বিখ্যাত শাসক সুলতান মাহমুদ গজনবী এই সময় ১৭ বার ভারতবর্ষে অভিযান পরিচালনা করেন এবং প্রত্যেকটি অভিযানে তিনি বহু রাজ্য ও রাজাকে পরাজিত করে বিজয়ী হন। কিন্তু তিনি ভারতবর্ষে স্থায়ী শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি।
তৃতীয় পর্যায় ছিল ১১৯১ থেকে ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে। আফগানিস্তানের ঘুর সাম্রাজ্যের শাসক মুইজউদ্দিন মুহাম্মদ ঘুরী ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে দিল্লি ও আজমীরের চৌহান বংশের রাজা পৃথ্বিরাজ চৌহানকে পরাজিত করে ভারতবর্ষে প্রথম স্থায়ী মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।
![]() |
তরাইনের যুদ্ধ |
যদিও মুসলিম বিজেতাদের বিজয়ের বহুবছর পূর্বে অর্থাৎ মহানবী (স) এর জীবদ্দশায় ভারতবর্ষে ইসলামের আগমন ঘটেছিল। মুসলিম বিজয়ের পূর্বে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিক্যালটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
৫৫০ খ্রিস্টাব্দে গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর সমগ্র ভারতবর্ষ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে। গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের প্রায় ২৫০ বছর পর্যন্ত ভারতবর্ষে আর কোন বৃহৎ স্থায়ী সাম্রাজ্যে গঠিত হতে পারে নি। এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্য সমূহ একটি অন্যটির বিরোদ্ধে যুদ্ধে-বিগ্রহে লিপ্ত থাকত, ফলে ভারতবর্ষে অরাজকতার পরিস্থিতী বিরাজ করছিল।
আরও পড়ুন:যেভাবে ভারতবর্ষে ইসলামের আগমন ঘটে!
এই রাজ্যসমূহের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল থানেশ্বর রাজ্য। থানেশ্বরের পুষ্যভূতি রাজবংশের রাজা প্রভাকরবর্ষণ হুন ও গুর্জার জাতীকে পরাজিত করে থানেশ্বরে একটি শক্তিশারী রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তার পুত্র হর্ষবর্ধন ছিলেন থানেশ্বরের শ্রেষ্ঠ সম্রাট। তিনি ৬০৬ খ্রিস্টাব্দে থানেশ্বরের সিংহাসনে আরোহণ করেন। রাজা হর্ষবর্ধন হিন্দু ভারতকে একত্রিত করে পুনারয় একটি কেন্দ্রীয় শক্তির অধীনে নিয়ে আসার প্রচেস্টা চালান।
তিনি পান্জাব, সিন্ধু, কামরুপ ব্যাতিত সমগ্র উত্তর ভারত তার অধীনে নিয়ে আসেন।এমনকি তিনি গৌড়ের স্বাধীন রাজা শশাঙ্ককে পরাজিত করতে সক্ষম হন। তার পর আর কোন হিন্দু শাসক এত বৃহৎ রাজ্য শাসন করতে পারেন নি। তাই তাকে হিন্দু ভারতের শ্রেষ্ঠ সম্রাট বলা হয়।
![]() |
রাজা হর্ষবর্ধন |
৬৪৭ খ্রিস্টাব্দে রাজা হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর ভারতবর্ষের ঐক্য, সংহতি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ধূলিসাৎ হয়ে যায় এবং উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে পুনরায় অনেক গুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজ্য স্থাপিত হয়। উত্তর ভারতের রাজ্যসমূহ হলো - কাশ্মীর, গুজরাট, কনৌজ, বুন্দেল ভন্ড, মালব, আজমীর ও দিল্লী, সিন্ধু এবং বাংলা। দক্ষিণ ভারতের রাজ্য সমূহ হলো- পল্ব, চালুক্য, রাষ্ট্রকূট, পান্ড্য, চোলা, চেরা ইত্যাদি। কোন কেন্দ্রীয় সরকার না থাকায় এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হিন্দু রাষ্ট্রগুলি সংকীর্ণ গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ হয়ে বহির্বিশ্বের সাথে সম্পর্কহীন অবস্থায় ছিল। ফলে তারা অনগ্রসর ও পশ্চাদপদ জাতি হয়ে পড়ে। ঠিক এমন দূরবস্থায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্টার মাধ্যমে ভারতবর্ষের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটে।
আরও পড়ুন:ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাস (সিন্ধু সভ্যতা থেকে মুসলিম বিজয়পূর্ব যুগ)
✏️তথ্যের উৎস :
📘 ভারতবর্ষের ইতিহাস - ড. সৈয়দ মাহমুদুল হাসান
📘 ভারতে মুসলিম রাজত্বের ইতিহাস – এ.কে.এম আবদুল আলীম
📘 মোগল সাম্রাজ্যের সোনালী অধ্যায় – শাহাদাত হোসেন খান
📘 ভারতে মুসলিম শাসনের ইতিহাস – ড. মুহাম্মদ ইনামুল হক
📘 ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের ইতিহাস – ড. মোহাম্মদ গোলাম রসূল
📘 ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসন – আব্দুল করিম
📘 মুঘল ভারতের ইতিহাস – মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান
📘 মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের ইতিহাস – অনিরুদ্ধ রায়
📘 উইকিপিড়িয়া, এনসাইক্লোপিডিয়া এবং বিভিন্ন ব্লগ ও অনলাইস ওয়েব সাইট
➡️Keywords :
প্রাচীন ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ইতিহাস
মুসলিম বিজয় পূর্বে ভারতবর্ষ কেমন ছিল?
ভারতের প্রাচীন রাজনীতী
ভারতবর্ষে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
ভারতবর্ষের ইতিহাস
রাজা হর্ষবর্ধনের ইতিহাস
0 মন্তব্যসমূহ