বর্তমানে আমরা রুম বলতে সাধারণত তাৎকালীন রুমান সাম্রাজ্যে কিংবা আধুনিক যুগের ইতালির রাজধানী রুমকে বুঝে থাকি। তবে একাদশ শতাব্দীতে এশিয়া মাইনর তথা আনাতোলিয়াকেও রুম বলা হত। এক সময় এই রুমকে কেন্দ্র করেই প্রতিষ্ঠিত হয় রুম সালতানাত। ১০৫৫ খ্রিস্টাব্দে সুলতান তুঘ্রীল বেগ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বিখ্যাত সেলজুক সাম্রাজ্যের অংশ হওয়ায়, এটিকে রুমের সেলজুক সালতানাতও বলা হয়। রুম সালতানাতের প্রথম রাজধানী ছিল ইজনিক তথা নিকিয়া পরবর্তীতে কোনিয়াতে রাজধানী স্থানান্তর করা হয়।
প্রতাপশালী সেলজুক সাম্রাজ্যের পতনের পর তুর্কি জাতির নেতৃত্ব গ্রহণ করে রুম সালতানাত। ১০৭৭ খ্রি. সুলাইমান কর্তৃত প্রতিষ্ঠিত এই সালতানাত ১৩০৭ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় দুইশত বছর আনাতোলিয়ায় মুসলিম জাতির রক্ষক হিসেবে শাসনকার্য পরিচালনা করে। রুমের সুলতানরা খ্রিস্টান বাইজান্টাইন ও উগ্র ক্রুসেড যোদ্ধাদের বিরোদ্ধে ঢাল হয়ে আনাতোলিয়ার মুসলমানদের রক্ষা করেছিল। কিন্তু চতুরদ্শ শতাব্দীর শেষের দিকে এক বর্বর জাতীর আক্রমণের ফলে এই সালতানাতের পতন ঘটে।
কিভাবে রুমের সেলজুক সালতানাতের উত্থান হয়েছিল? এই সালতানাতের বিখ্যাত সুলতান কারা ছিলেন? কিভাবে তারা খ্রিস্টান ক্রুসেড যোদ্ধাদের হাত থেকে মুসলমানদের রক্ষা করেছিল? সর্বপরি কাদের আক্রমণের ফলে এই সালতানাতের পতন হয়েছিল? সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
আরও পড়ুন:উসমানীয় সাম্রাজ্যের ইতিহাস
রুমের সেলজুক সাম্রাজ্যের উত্থানের ইতিহাস জানতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে ঐতিহাসিক মানজিকার্টের প্রান্তরে। ১০৭১ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত হওয়া মানজিকার্টের যুদ্ধে, সেলজুক সুলতান মোহাম্মদ আল্প আরসালান মাত্র ৪০ হাজার মুসলিম বীর সেনানী নিয়ে দুই লক্ষাধিক খ্রিস্টান বাইজান্টাইন বাহিনীকে পরাজিত করেন। এই যুদ্ধে বিজয়ের ফলে বায়জান্টাইন সাম্রাজ্যের অধিনে থাকা অঞ্চল আনাতোলিয়ায় সেলজুক সাম্রাজ্যের অধিনে চলে আসে।
![]() |
মানজিকার্ট |
সুলতান আলপ আরসালান রাজ্য জয়ের পর আনাতোলিয়ার শাসনভার তার চাচা কুলতিমিশের পুত্র সুলায়মানকে প্রদান করেন। এই সুলাইমান পরবর্তীতে রুমের সেলজুক সালতানাতের গোড়াপত্তন করেন। বিচক্ষণ ও দক্ষ শাসনকর্তা সুলায়মান তার রাজ্যসীমা উত্তরে কৃষ্ণসাগর ও পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত করেন এবং বায়জান্টাইন সম্রাটকে কর দানে বাধ্য করেন।
১০৭৫ সালে তিনি বাইজেন্টাইন শহর নিকাইয়া এবং নিকোমেডিয়া বিজয় করেছিলেন। ১০৭৭ সুলাইমান সেলজুক সাম্রাজ্যের সাথে বিদ্রোহ করে, নিজেকে স্বাধীন সুলতান ঘোষণা করেন এবং আনাতোলিয়ায় স্বাধীন রুমের সেলজুক সালতানাতের গোড়াপত্তন করেন। এরপর তিনি ইজনিক তথা নিকিয়ায় সালতানাতের রাজধানী স্থাপন করেন।
সুলায়মান যখন নিজেকে রুম সালতানাতের স্বাধীন সুলতান হিসেবে ঘোষণা করেন, তখন সেলজুক সাম্রাজ্যের সিংহাসনে উপবিষ্ঠ ছিলেন শ্রেষ্ঠ সেলজুক সুলতান মালিক শাহ। অত:পর তিনি স্বভাবতই ১০৮৬ খ্রি, তার ভাই মেলিক তেকিশের নেতৃত্বে সুলাইমানের বিরোদ্ধে যুদ্ধ অভিযান পরিচালনা করেন। যুদ্ধে সুলাইমান মেলিক তেকিসের হাতে পরাজিত ও নিহত হন এবং সুলাইমানের পুত্র কিলিজ আরসলানকেও বন্দী করা হয়।
সুলতান মালিক শাহ ১০৯২ সালে মৃত্যুবরণ করলে, পরবর্তী সেলজুক সুলতান মাহমুদ কিলিজ আরসলানকে মুক্তি দেন। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি তাঁর পিতার প্রতিষ্ঠিত রুম সালতানাতের সিংহাসানে আরোহণ করেন। অন্যদিকে সুলতান মালিক শাহের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারী দ্বন্দ ও সিংহাসন দখলেকে কেন্দ্র করে গৃহযুদ্ধ ফলে শক্তিশালী সেলজুক সাম্রাজ্য দুর্বল হতে থাকে।
আরও পড়ুন:সেলজুক সাম্রাজ্যের উত্থানের ইতিহাস
সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগে সুলতান কিলিজ আরসালান পুনরায় স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং স্বাধীন ভাবে রাজ্য পরিচালনা করতে থাকেন। মূলত তার সময় থেকে রুম সালতানাত পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে। তিনি বায়জান্টাইন সাম্রাজ্যের অনেক অঞ্চল বিজয় করে সালতানাতের পরিধি আরও বৃদ্ধি করেন। সুলতান কিলিজ আরসালান যখন রুস সালতানাতকে শক্ত ভিত্তির উপর দাড় করাচ্ছিলেন, তখন পশ্চিমের ক্ষুদ্রার্থ ও ধর্মান্ধ ইউরোপীয় খ্রিস্টানরা মুসলমানদের উপর যাপিয়ে পড়ে ধন সম্পদ লুণ্ঠন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
![]() |
রুম সালতানাত |
তাদের যুদ্ধ অভিযানের লক্ষ্য তথাকথিত জেরুজালেম বিজয় বলা হলেও এই নরপিশাচরা সম্মুখে যেই শহর পেয়েছে, সেটিই লুন্ঠন করেছে এবং শহরের বাসিন্দাদের উপর হত্যা, ধর্ষণ সহ নানাধরনের অমানুষিক অত্যাচার চালিয়েছে। ১০৯৬ খ্রিস্টাব্দে গডফ্রের নেতৃত্বে সত্তর হাজারের বিশাল ক্রুসেড বাহিনী এশিয়া মাইনরে প্রবেশ করে। তাদের উদ্দেশ্যে এশিয়া মাইনর হয়ে সিরিয়া এবং ফিলিস্তিনে অভিযান চালানো।
রুমের সুলতান কিলিজ আরসালানের নেতৃত্বে সেলজুক বাহিনী ক্রুসেড যোদ্ধাদের পরাজিত করতে সক্ষম হন। ফলে বর্বর ক্রুসেড নরপশুদের হত্যাযজ্ঞ থেকে আনাতোলিয়ার নিকিয়া শহর এবং সাধারণ মুসলমানরা রক্ষা পাই। ক্রসেড যোদ্ধারা আনাতোলিয়ায় পরাজিত হয়ে, মধ্যযুগের মুসলমানদের সমৃদ্ধশালী নগর এন্টিওক আক্রমণ করে প্রায় দশ হাজার মুসলিম নর-নারী,শিশু-বৃদ্ধা নির্বিশেষে হত্যা করে।
আরও পড়ুন:সুলতান আল্প আরসালান
এরপর বর্বর ক্রসেড নরপশিাচদের হাত থেকে রক্ষা পাইনি- জাফা,হাইফা, আক্কা, সিডন, এডিসা, ত্রিপলি, বৈরুত কিংবা জেরুজালেম নগরের কোন মুসলমান। রক্তাক্ত ক্রুসেড যুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা হয়তু অন্য একদিন হবে। চলুন এবার ফিরে যায় আনাতোলিয়ায়। ক্রুসেড যোদ্ধাদের পরাজিত করা প্রথম মুসলিম শাসক সুলতান কিরিজ আরসালানের বীরত্বগাঁথা ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে। ক্রুসেড যোদ্ধাদের আক্রমণের পর তিনি ১০৯৬ নিকিয়া থেকে কোনিয়ায় রাজধানী স্থানন্তর করেন। তখন থেকে কোনিয়া হয়ে উঠে তুর্কি জাতির সূতিকাগার।
রুম সালতানাতের প্রকৃত প্রতিষ্টাতা সুলতান কিলিজ আরসালান ১১০৯ খ্রিস্টাব্দে এক যুদ্ধে মৃত্যু বরণ করেন। ১১০৯ খ্রিস্টাব্দে সুলতান কিলিজ আরসালানের মৃত্যুর পর থেকে ১২২০ খ্রিস্টাব্দ পরযন্ত ৮ সুলতান রুম সালতানাত শাসন করে। তারা আনাতোলিয়া কেন্দ্রিক শাসকার্য পরিচালনা করে। আর এই সময় মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বে ছিলেন নুরুদ্দিন জেঙ্গি এবং সালাউদ্দীন আইয়ুবির মত বীর যোদ্ধারা। তাই রুমের সুলতানাদের ইতিহাস তাদের বীরত্বের কাছে ধূসর হয়ে যায়।
![]() |
সুলতান কিলিজ আরসা্লান |
অত:পর ১২২০ খ্রিস্টাব্দে রোম সালতানাতের সিংহাসনে আরোহণ করে সুলতান আলাউদ্দীন কায়কোবাদ। তিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ রুমীয় সেলজুক সুলতান। তার শাসন আমলে চেঙ্গিস খানের নেতৃত্বে উত্থান হয় মুসলিম বিশ্বের ত্রাস বর্বর মোঙ্গলদের। খ্রিস্টান ক্রসেড নরপশুদের হত্যাযঙ্গের প্রায় দুইশত পর মোঙ্গলরা মুসলিম বিশ্বের আরও বর্বরবতর ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল। তারা ১২২০ খ্রিস্টাব্দে খাওয়ারিজ সাম্রাজ্যকে পরাজিত করে মধ্যএশিয়ার মুসলমানদের স্বৃতিবিজড়িত জ্ঞানবিজ্ঞানের নগরী বোখারা, হিরাত, বলখ, তাসখন্দ, খোজান্দ, নিশাপুর এবং সমরকন্দে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাই। তাদের আক্রমণে সম্পূর্ণ নগর মুসলিম শূন্য হয়ে পড়ে এবং মুসলিম সভ্যতা বিলীন হয়ে যায়।
সুলতান আলাউদ্দিন সম্পূর্ণরুপে সফল না হলেও মোঙ্গলদের আক্রমণকে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত মোঙ্গলরা আনাতোলিয়া দখল করতে পারেনি। তাছাড়া তিনি বায়জান্টাইন, খাওয়ারিজম এবং আয়ুবিদ সাম্রাজ্যের অনেক অঞ্চল নিজের সালাতানভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সবদিক বিবেচনায় তার শাসনকাল ছিল রুম সালতানাদের স্বর্ণযুগ।
সুলতান আলাউদ্দীনের সেনাপতিদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন আর্তগ্রুল গাজী, যিনি ছিলেন উসমানীয় সালতানাতের প্রতিষ্ঠাতা সুলতান ওসমান গাজীর পিতা। আর্তুগুল গাজী সুলতান আলাউদ্দীনের অধিনে বায়জান্টাইনদের অনেক অঞ্চল বিজয় করেন। সুলতান আলাউদ্দীন আর্তগ্রুল গাজীকে সগুতের শাসনভার অর্পণ করেন। এবং এই সগুতকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে উসমানীয় সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন হয়।
আরও পড়ুন:মানজিকার্টের যুদ্ধের ইতিহাস
১২৩৭ খ্রিস্টাব্দে সুলতান আলাউদ্দীনের মৃত্যুর পর তার পুত্র দ্বিতীয় কাইখসরু রুম সালতানাতের সিংহাসনে আরোহণ করেন। কাইখসরুর শাসনকালে রোমের সালতানাত অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ ও দ্বন্দের ফলে দুর্বল হতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গোলরা আনাতোলিয়ায় আক্রমণ করে। মঙ্গোল বাহিনী ১২৪২ সালে এরজুরুম শহর দখল করে এবং ১২৪৩ সালে সুলতান কাইখসরু কোসেদাগ যুদ্ধে দুর্দর্ষ মোঙ্গল সেনাপতি বাইজু নয়ানের কাছে পরাজিত হয়।
![]() |
কুসদাগ যুদ্ধ |
পরাজিত হওয়ার পর সেলজুক তুর্কিরা মঙ্গোলদের প্রতি আনুগত্যের শপথ করতে বাধ্য হয় এবং তাদের অনুগত হয়ে ওঠে। সুলতান নিজেও ১২৪৩ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধের পরে বায়জান্টাইন শহর আন্তালিয়ায় পালিয়ে যান এবং সেখানে তিনি ১২৪৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। সুলতান কাইখসরুর মৃত্যুর পর রোমের সেলজুক সালতানাত তার তিন ছেলের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
সুলতানের জ্যৈষ্ঠ পুত্র দ্বিতীয় কায়কাউস সালতানাতের এক অংশে স্বাধীনভাবে শাসন করতেন। অন্যদিকে তাঁর অপর দুই পুত্র ৪র্থ কিলিজ আরসলান এবং দ্বিতীয় কায়কোবাদ মঙ্গোলদের অধীনে কোনিয়া কেন্দ্রীক সালাতানাতের অপর অংশে শাসন পরিচালনা করতেন। ১২৫৬ সালের অক্টোবরে মোঙ্গল সেনাপতি বাইজু নয়ান আকসারায়ের নিকটে সুলতান দ্বিতীয় কায়কাউসকে পরাজিত করেন এবং এর মাধ্যমে সমগ্র আনাতোলিয়া মোঙ্গলদের অধীনস্ত হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: সুলতান মালিক শাহের ইতিহাস
১২৬০ সালে পরাজিত সুলতান দ্বিতীয় কায়কাউস কায়ী বসতির প্রধান আর্তুগুল বের সহায়তায় কোনিয়া থেকে ক্রিমিয়াতে পালিয়ে যান। এবং তিনি ১২৭৯ সালে ক্রিমিয়াতে মৃত্যুবরণ করেন। মূলত তার মৃত্যুর মাধ্যমে স্বাধীন সেলজুক সালতানাতের পতন ঘটে। এরপর ১৩০৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সেলজুক শাসকরা মোঙ্গলদের অধীনস্থ হয়ে নামেমাত্র সুলতান ছিলেন। সাম্রাজ্য পরিচালনায় মোঙ্গলদের অবাদ্ধ হলে বা বিরোধিতা করলে সুলতানদের বিনাবিচারে হত্যা করা হত।
একইভাবে মঙ্গোলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের জন্য চতুর্থ কিলিজ আরসলানকে ১২৬৫ সালেহত্যা করা হয়। তার মৃত্যুর পর তৃতীয় কায়খসরুকে মঙ্গোলদের অধিনস্ত সমগ্র আনাতোলিয়ার নামমাত্র শাসক হিসেবে অধিষ্ঠিত করা হয়। এভাবে রুমের সেলজুক সালতানাত মোঙ্গলদের পদানত হওয়ার পর,সালতানাতটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বেইলিক তথা আমিরাতে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল।
![]() |
তুর্কি বেইলিক |
মোঙ্গলদের অধিনস্ত সুলতান তৃতীয় কাইখসরুর শাসনামলের শেষের দিকে কোনিয়া ব্যাতিত বাকি সমগ্র রোম সালতানাতের অঞ্চল সমূহ বেইলিক এবং সেলজুক আমিরদের দ্বারা স্বাধীনভাবে শাসিত হতে থাকে। বেইলিকদের মধ্যে অন্যতম ছিল কারামান এবং ওসমানী বেইলিক। এইসব বেইলিক গুলো স্বাধীনভাবে শাসন পরিচালনা করলেও, তারা সুলতানদের নামে খুতবা প্রদান করতেন এবং সুলতানকে স্বীকৃতি দিতেন।
১২৮২ খ্রি. মোঙ্গলদের সাথে দ্বন্দ দেখা দিলে মোঙ্গলরা সুলতান তৃতীয় কাইখসরোকেও মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। তার মৃত্যুর পর দ্বিতীয় মাসুদ কোনিয়ার নতুন সুলতান হিসাবে অধিষ্ঠিত হন। শেষ দুই সেলজুক সুলতান দ্বিতীয় মাসুদ এবং তৃতীয় কায়কোবাদ ছিলেন মোঙ্গলদের হাতের পুতুলের মত। তাদের হাতে কোন ক্ষমতা ছিল না। মোঙ্গলরা সালতানাতের শাসনকার্য পরিচালনা করত। এই নামধারী দুই সুলতানকে ১২৮২ থেকে ১৩০৭ খ্রি. পর্যর্ত মোঙ্গলরা পালাবদল করে তিনবার ক্ষমায় আরোহণ করায়।
আরও পড়ুন:আধুনিক তুরস্কের ইতিহাস
অবশেষে মঙ্গোলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের জন্য ১৩০৭ সালে সুলতান দ্বিতীয় মাসুদক হত্যা করা হয়। এরপর মোঙ্গলরা ইলখানাত সাম্রাজ্যের অধীনে সরাসরি কোনিয়ার শাসনভার গ্রহণ করে। এভাবে মোঙ্গলদের হাতে পতন হয় রোমের সেলজুক সালতানাত। রোম সালতানাতের পতনের পর সমগ্র অঞ্চল বিভিন্ন বেইলিক এবং আমিরাতের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
![]() |
গাজান খান |
তাছাড়া মঙ্গোল রাজ্য ইলখানাতের শাসক গাজান খান এবং তার ভ্রাতা উলাজাইতু মুসলিম নাম মোহাম্মদ খোদাবান্দা ইসলাম গ্রহণ করলে তুর্কি বেইলিক এবং আমিরাতগুলোতে মোঙ্গল ভীতি চলে যায়। পরবর্তীতে মোঙ্গলদের পতনের পর প্রথম দিকে কোনিয়া সহ অধিকাংশ সেলজুক অঞ্চল কারামানি রাজবংশ দখল করলেও, কারামানিদের পর এই সব অঞ্চল উসমানীয় রাজবংশের অধিনে চলে আসে। অত:পর সেলজুক সালতানাতের ধ্বংসস্তূপের উপর আনাতোলিয়াকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠীত হয় তিন মহাদেশ বেষ্টিত উসমানীয় সাম্রাজ্য।
ভিডিও দেখুন:
0 মন্তব্যসমূহ