আরও পড়ুন: আব্বাসীয় খিলাফতের ইতিহাস (৮৪২-৯৪৪খ্রি.) ও খলিফাদের বংশ তালিকা
আব্বাসীয় খেলাফত ছিল ইসলামের তৃতীয় খেলাফত । রাজ্য বিজয়, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় এই খিলাফতকে ইসলামের ইতিহাসে স্বর্ণযুগ হিসেবে বিবেচিত করা হয়। ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে উমাইয়া খেলাফতের পতনের পর উত্থান হওয়া আব্বাসীয় খেলাফত ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যযন্ত দীর্ঘ প্রায় ৫০০ বছর মুসলিম বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়েছিল। ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দে মোঙ্গলদের আক্রমণের ফলে এই খেলাফতের পতন ঘটলেও, ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আব্বাসীয় খলিফারা মিশরের মামলুক সুলতানতের অধীনে মুসলিম জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছিল।
আব্বাসীয় খলিফাদের এই দীর্ঘ শাসনকালকে বিভিন্ন পর্যায় তথা যুগে বিভিক্ত করা হয়। যুগ গুলো হলো যথাক্রমে- গৌরবের যুগ, তুর্কি, বুয়াহিদ, সেলজুক, জেঙ্গী ও আয়ুবিদ যুগ, মোঙ্গল আক্রমণ ও পতনের যুগ, মিশরের মামলুক সালতানাত কর্তৃক খিলাফত পুনরুদ্ধারের যুগ এবং সর্বশেষ উসমানীয় তুর্কি সালতানাত কর্তৃক আব্বাসীয় খেলাফতের চূড়ান্ত পতনের যুগ।। আজকের ভিডিওতে আপনাদের জানাবো গৌরবের যুগের আব্বাসীয় খলিফাদের বংশ তালিকা এবং শাসনকাল সম্পর্কে। তাই ভিডিও সম্পূর্ণ দেখুন, আর নতুন হলে আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইভ করে পাশে থাকা বেল আইকনটি প্রেস করার অনুরুধ থাকলো।
৭৫০ খ্রিস্টাব্দে উমাইয়া রাজবংশের পতনের পর ইসলামী খেলাফতের মহান দায়িত্ব লাভ করে আব্বাসীয় রাজবংশ। আব্বাসীয় বংশ ছিল মক্কার বিখ্যাত হাশেমী গোত্রের একটি শাখা। মূলত আব্বাসীয় বংশের নামকরণ করা হয় হযরত মুহাম্মদ (স) এর চাচা আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিবের নাম অনুসারে। ৬৫৪ খ্রিস্টাব্দে আব্বাস (রা) এর মৃত্যুর পর তার পুত্র আব্দুল্লাহ আব্বাসীয় পরিবারের কর্তৃত্ব লাভ করেন। আব্দুল্লাহ ইসলামের ইতিহাস ও হাদিস শাস্ত্রে ইবনে আব্বাস নামে সর্বাধিক পরিচিত।
আরও পড়ুন:মক্কার কুরাইশ গোত্রের বংশ তালিকা৬৮৩ খ্রি. আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের মৃত্যুর পর তার পুত্র আলী এবং ৭৩৫ খ্রি. আলীর মৃত্যুর পর তার পুত্র মুহাম্মদ আব্বাসীয় পরিবারের কর্তৃত্বলাভ করেন। মুহাম্মদ ছিলেন আব্বাসীয় আন্দোলনের প্রবক্তা। তিনি উমাইয়াদের বিপক্ষে এবং হাশেমীদের পক্ষে জনমত গড়ে তুলে আব্বাসীয়দের ক্ষমতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করতে সক্ষম হন। মুহাম্মদ – ইব্রাহীম, আবুল আব্বাস এবং আবু জাফর নামে তিন পুত্র রেখে ৭৪৪ খ্রি. মৃত্যুবরণ করেন।
![]() |
ইবনে আব্বাসের বংশ তালিকা |
মুহাম্মদের মৃত্যুর পর তার জৈষ্ঠপুত্র ইব্রাহীম আব্বাসীয় পরিবারের হাল ধরেন। তার সময় আব্বাসীয় আন্দোলন চূড়ান্তরূপ লাভ করে। ৭৪৯ খ্রিস্টাব্দে ইব্রাহীমের মৃত্যুর পর তার ভ্রাতা আবুল আব্বাস আব্বাসীয় বংশের কর্তৃত্ব লাভ করেন। ৭৪৯ খ্রি. কূফায় আবুল আব্বাসকে খলিফা হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং তিনি আস সাফফাহ বা রক্তপিপাসু উপাধি ধারণ করেন। তিনি ৭৫০ খ্রি. জাবের যুদ্ধে শেষ উমাইয়া খলিফা দ্বিতীয় মারওয়ানকে পরাজিত করে দামেস্ক কেন্দ্রীক উমাইয়া শাসনের অবসান ঘটান। তখন থেকে আব্বাসীয় বংশের খিলাফত শুরু হয়। এরপর আবুল আব্বাস কুফা থেকে আনবারে আব্বাসীয় খিলাফতের রাজধানী স্থাপন করেন।
আরও পড়ুন:রাশেদিন খিলাফতের ইতিহাস (৬৩২-৬৬১খ্রি,) এবং খলিফাদের বংশ তালিকা
৭৫৪ খ্রি. আব্বাসীয় খিলাফতের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম খলিফা আবুল আব্বাস আস সাফফার মৃত্যুর পর তার অপর ভ্রাতা আবু জাফর “আল মনসুর বা বিজয়ী উপাধি ধারণ করে বাগদাদের সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি ৭৬২ খ্রি. আনবার থেকে বাগদাদে রাজধানী স্থানান্তর করেন। তিনি রাজ্যের বিদ্রোহ দমন, রাজ্য বিস্তার ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে প্রভূত অবদান রেখে আব্বাসীয় রাজবংশকে শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। তাই খলিফা আবু জাফরকে আব্বাসীয় খিলাফতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।
৭৭৫ খ্রি. খলিফা আবু জাফর আল মনসুরের মৃত্যুর পর তার পুত্র আল মাহাদী সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি ৭৭৫ খ্রি. থেকে ৭৮৫ খ্রি. ক্ষমতায় ছিলেন। ৭৮৫ খ্রি, খলিফা আল মাহদীর মৃত্যুর পর তার জৈষ্ঠ্য পুত্র আল হাদী খেলাফতের দায়িত্বলাভ করেন। কিন্তু ৭৮৬ খ্রি. খলিফা আল হাদীর আকস্মিক মৃত্যুর পর তার ভ্রাতা হারুনুর রশীদ খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। খলিফা হারুনুর রশিদ সাম্রাজ্যের বিদ্রোহ দমন, রাজ্য বিজয় জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষা-গবেষণার উন্নয়নের মাধ্যমে ইসলামের স্বর্ণযুগের সূচনা করেন।
আরও পড়ুন: মহানবীর (স) বংশ তালিকা
ইসলামের ইতিহাসের মহান খলিফা হরুন উর রশিদ আল আমীন, আল মামুন এবং মু’তাসিম বিল্লাহ নামে তিন সন্তার রেখে ৮০৯ খ্রি. মৃত্যুর পথের যাত্রী হন। খলিফা হারুনুর রশিদের মৃত্যুর পর তার জৈষ্ঠ্যপুত্র আল আমীন বাগদাদের সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি ৮০৯ থেকে ৮১৩ খ্রি, শাসন ক্ষমতায় ছিলেন। ৮১৩ খ্রি. খলিফা আল আমীনের মৃত্যুর পর তার ভ্রাতা আল মামুন বাগদাদের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন।
খলিফা আল মামুনের শাসনকাল আব্বাসীয় খিলাফতের এক গৌরবময় যুগ। তিনি নিজেও একজন বিদ্বান শাসক ছিলেন। ৮৩০ খ্রি. জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেওয়ার জন্য বায়তুল হিকমা বা House of Wisdom প্রতিষ্ঠা করেন।
![]() |
বায়তুল হিকাম |
তৎকালীন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জ্ঞানি পিপাসুরা এই শিক্ষা নিকেতনে জ্ঞান লাভের উদ্দেশ্যে আগমন করতেন। জ্ঞান-বিজ্ঞানে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখার কারণে খলিফ আল মামুনের শাসনকালকে ইসলামের ইতিহাসে স্বর্ণযুগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ৮৩৩ খ্রি. খলিফা আল মামুনের মৃত্যুর পর তার অপর ভ্রাতা মু’তাসিম বিল্লাহ আব্বাসীয় বংশের ক্ষমতায় আসীন হন। খলিফা মু’তাসিম বিল্লাহকে আব্বাসীয় খেলাফেতের শেষ শক্তিশালী খলিফা হিসেবে বিবেচিত করা হয়। কারণ খলিফা মু”তাসিম বিল্লাহর পরবর্তী খলিফারা অন্য কোন রাজবংশ কিংবা সালতানাতের অধীনে নামেমাত্র খলিফা হিসেবে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
অত:পর ৮৪২ খ্রি. খলিফা মু’তাসিম বিল্লাহর মৃত্যুর পর তুর্কী দেহরক্ষীরা আব্বাসীয় খিলাফতের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠে। ৮৪২ খ্রি. থেকে ৯৪৪ খ্রি. পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ১০০ বছর তুর্কী দেহরক্ষীদের কু:শাসনের ফলে আব্বাসীয় খলিফাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস অন্ধকারচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।
0 মন্তব্যসমূহ