৬৩২ খ্রিস্টাব্দে. ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী, হযরত মুহাম্মদ (স) ইন্তেকাল করেন। মহানবী (স) এর জীবদ্দশ্যায়, তিনি মানবজাতীর জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা স্বরূপ, পৃথিবীর একমাত্র সত্যধর্ম ইসলাম এবং মুসলিম উম্মাহর জন্য, মদীনা কেন্দ্রীক ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে যান। মূলত তাঁর ওফাতের পর, ইসলাম ধর্ম, ইসলামী রাষ্ট্র এবং মুসলিম উম্মাহর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য, ইসলামে খেলাফতের শাসন ব্যবস্থার উৎপত্তি হয়। আর এই খেলাফতের শাসন ব্যবস্থার প্রধানকে বলা হয় খলিফা।
ইসলামের প্রথম খেলাফত হলো রাশেদিন খেলাফত। মহানবী (স) এর ওফাতের পর, ইসলামী রাষ্ট্র ও মুসলিম জাতির নেতৃত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে, ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে হযরত আবু বকর (রা, ইসলামের প্রথম খলিফা হিসেবে নির্বাচিত হন। প্রথম খলিফা আবু বকর (রা) এর, খেলাফত লাভের পর থেকে শুরু করে, দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা), তৃতীয় খলিফা উসমান (রা) এবং ৬৬১ খ্রিস্টাব্দে চতুর্থ ও সর্বশেষ রাশেদিন খলিফা, হযরত আলী (রা) এর ইন্তেকাল পর্যন্ত, মোট চারজন খলিফার দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছরের শাসনকালকে, রাশেদিন খিলাফতের শাসনকাল হিসেবে অভিহিত করা হয়। যা ইসলামের ইতিহাসে সোনালী যুগ হিসেব পরিচিত।মূলত আরবের বিখ্যাত কুরাইশ বংশ হতে মুহাম্মদ (স) এবং ইসলামের চার খলিফার গোত্রের উৎপত্তি।
আরও পড়ুন: আব্বাসীয় খিলাফতের ইতিহাস (৭৫০-৮৪২ খ্রি,) এবং খলিফাদের বংশ তালিকা
ফিহর তথা কুরাইশের থেকে কুরাইশ বংশের উৎপত্তি এবং নামকরণ হয়। কুরাইশের পরবর্তী বংশধর ছিলেন গালিব, গালিবের পরবর্তী বংশধর কা’বের পুত্রদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আ’দী, তায়িম এবং মুররা। কা’বের পুত্র তায়িম থেকে, প্রথম খলিফা আবু বকর (রা) এর, তায়িম গোত্রের নামকরণ ও উৎপত্তি হয়। তায়িমের পরবর্তী বংশধর ছিলেন সা’দ এবং সা’দের পুত্র আবু কুহাফা হলেন, আবু বকর (রা) এর পিতা। আবু বকর (রা) ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে খিলাফত লাভ করেন এবং ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন।
![]() |
কুরাইশ বংশ |
কা’বের অন্যপুত্র আ’দ থেকে, দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা) এর, আদী বংশের নামকরণ ও উৎপত্তি হয়। আ’দের পরবর্তী বংশধর ছিলেন আ’উজ্জা, তার পরবর্তী বংশ ধর নাফেল এবং নাফেলের পুত্র খাত্তাব ছিলেন, উমর (রা) এর পিতা। হযরত উমর (রা) ৬৩৪ থেকে ৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত খলিফার দায়িত্ব পালন করেন। অন্যদিকে কা’বের পুত্র মুররা থেকে, তৃতীয় খলিফা উসমান (রা) এর উমাইয়া গোত্র এবং চতুর্থ খলিফা আলী (রা) ও মুহাম্মদ (স) এর, হাশেমী গোত্রের উৎপত্তি হয়।
আরও পড়ুন:রাশেদিন খিলাফতের উত্থান
মুররার পরবর্তী বংশধর ছিলেন কিলাব, কিলাবের পরের বংশধর কুশাই, কুশাইয়ের পরবর্তী বংশধর, আব্দে মানাফের পুত্রদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন, আব্দু শামস এবং হাশিম। আব্দু শামসের পুত্র উমাইয়া থেকে, উমাইয়া বংশের নামকরণ ও উৎপত্তি হয়। উমাইয়ার পুত্রদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন, হারব এবং আল আস। আল আসের পুত্র আফফান ছিলেন, তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান (রা) এর পিতা। উসমান (রা) ৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে থেকে ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে, মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত শাসনক্ষমতায় ছিলেন।
আব্দু মানাফের অপর পুত্র হাশেম থেকে, হাশেমী গোত্রের নামকরণ ও উৎপত্তি হয়। হাশেমের পরবর্তী বংশধর, আব্দুল মুত্তালিবের পুত্রদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন, আব্দুল্লাহ, আবু তালেব এবং আব্বাস (রা)। আব্দুল্লাহ ছিলেন মুহাম্মদ (স) এর পিতা এবং আবু তালেব ছিলেন, চতুর্থ ও সর্বশেষ রাশেদিন খলিফা আলী (রা) এর পিতা। অন্যদিকে আব্বাস (রা) এর বংশধরদের থেকে, বিখ্যাত আব্বাসী রাজবংশের নামকরণ ও উৎপত্তি হয়। হযরত আলী (রা) ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬৬১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত, খেলাফতের দায়িত্ব পালন করেন।
৬৬১ আলী (রা) এর শাহাদাতের মাধ্যমে, রাশেদিন খিলাফতের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং উমাইয়া রাজবংশ ইসলামী খেলাফত ও মুসলিম জাতির নেতৃত্বে আসে। প্রসঙ্গত আব্দু শামসের পুত্র, উমাইয়ার পরবর্তী বংশধর হারবের পুত্র ছিলেন, মহনবী (স) এবং ইসলামের প্রধান শত্রু আবু সুফিয়ান। যদিও পরবর্তী আবু সুফিয়ান ইসলাম গ্রহণ করে, ইসলামের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। আবু সুফিয়ানের পুত্র মুয়াবিয়া (রা), ৬৬১ খ্রিস্টাব্দে আলী (রা) এর শাহাদাতের পর, দামেস্ক কেন্দ্রীক উমাইয়া রাজবংশ ও খেলাফত প্রতিষ্ঠা করেন। যা ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে আব্বাসীয় খেলাফতের উত্থানের মধ্যদিয়ে পতন ঘটে। আব্বাসীয় খেলাফতের পতনের পর প্রতিষ্ঠিত হয়, ইসলামের শেষ খিলাফত উসমানীয় তুর্কি খেলাফত।
আরও পড়ুন: মহানবীর (স) বংশ তালিকা
ভিড়িও দেখুন:
0 মন্তব্যসমূহ