ইরানের
রাজধানী ও বৃহত্তম শহর তেহরান। ইরানের জনসংখ্যা প্রায় ৮ কোটি ৩ লক্ষ জন। মোট জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ৯৫ ভাগ
শিয়া মুসলমান, ৪ ভাগ সুন্নি এবং বাকি এক ভাগ
খ্রিস্টান, ইহুদি, জয়থ্রুস্ট ও বাহাই ধর্মের অনুসারী।
১৬,৪৮,১৯৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটি মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয়
বৃহত্তম এবং পৃথিবীর সপ্তদশ বৃহত্তম রাষ্ট্র।
ইরানের মুদ্রার নাম ইরানি রিয়াল, তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির মুদ্রার নাম পরিবর্তন করে তুমান রাখতে প্রচেষ্ট্র চালাচ্ছে দেশটির সরকার।
ইরানের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এবং রাষ্ট্রীয় মাজহাব শিয়া মতলম্বি দ্বাদশী জাফরী। এই দ্বাদশ জাফরি শিয়া ইসলাম ১৬শ শতক থেকে ইরানের রাষ্ট্রধর্ম। তবে এর পাশাপাশি হানাফি, মালিকি,শাফিই ও জায়েদি মাজহাব ইরানে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। আধুনিক ফার্সি ইরানের রাষ্ট্রিয় ভাষা। ফার্সি ছাড়াও আরবি তুর্কি, কুর্দি, বেলুচি, তাতারি, আজারবাইজানি ইত্যাদি ভাষাও দেশটিতে প্রচলিত রয়েছে। ইরান অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং সামরিক দিক দিয়েও বিশ্ব অন্যতম একটি স্থান দখল করে আছে।
![]() |
ইরান, ম্যাপ |
খ্রিস্টপূর্ব ৫৫০ থেকে ৩৩০ খ্রিস্টপূর্বাদ্ধে সাইরাস দ্যা গ্রেট কতৃক প্রতিষ্ঠিত হাখমানেশী সাম্রাজ্য হল প্রথম পারস্য সাম্রাজ্য। এই সাম্রাজ্য পরবর্তীতে সমগ্র বিশ্বে পারস্য সাম্রাজ্য নামে পরিচিতি লাভ করে। ৩৩৪ থেকে ৩৩১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রীক সম্রাট আলেকজান্ডার পারস্য রাজ তৃতীয় দারিয়ুসকে পরাজিত করে পারস্য সাম্রাজ্য জয় করে। আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর তার সেনাপতি প্রথম সেলেউকাস এই অঞ্চল শাসন করত।
তার মৃত্যুর পর পারস্য পার্থিয়ান সাম্রাজ্যের অধীনে চলে যায়। তারা এই অঞ্চল খ্রিস্টপূর্ব ২৪৮ থেকে ২২৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শাসন করে। এরপর পারস্যে সাসনীয় সাম্রাজ্যের উত্থান ঘটে, যা ২২৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। এটিও পারসিক সাম্রাজ্য নামে বিবেচিত হত। এই সাম্রাজ্য ছিল ইরানে ইসলামের আগমনের পূর্বে সেখানকার সর্বশেষ সাম্রাজ্য।
আরও পড়ুন: ইরকা: ইতিহাস ও দেশ পরিচিতি
উল্লেখ্য,
একদা মহানবী (সঃ) পারস্য সম্রাট খসরুকে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে একটি পত্র পাঠিয়েছিলেন।
কিন্তু খসরু অহংকার বশত ক্রোধে জ্বলে উঠে এবং সেই পত্রটি টুকরা টুকরা করে ছিড়ে ফেলে দিয়েছিল।
এই পত্র ছেড়ার জন্য রাসুলুল্লাহ সঃ এইভাবে অভিশাপ দিয়েছিলেন “ তার সাম্রাজ্যও যেন মহান আল্লাহ অনুরুপভাবে ছিন্নভিন্ন করে দেন”
মহানবী সঃ এর ভবিষ্ৎবাণী শুনে তৎকালীন অমুসলিমরা হাসি ঠাট্টা করেছিল। এমনকি অনেক মুসলিমরাও সহজে বিশ্বাস করতে পারছিল না যে, এত বৃহৎ এবং শক্তিশালী সাম্রাজ্য তুলনামূলক ক্ষুদ্র ইসলামী রাষ্ট্র ও মুষ্টিমেয় মুসলিমদের পক্ষে বিজয় করা কিভাবে সম্ভব? কিন্তু সত্যধর্ম ইসলামের শেষ নবী মুহাম্মদ সঃ এর ভবিষ্যৎ বাণী কখনো বিফলে যায় না। অতঃপর কনস্টান্টিনোপোল বিজয়ের মত মহানবী সাঃ এর বাণী সত্য হলো, ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত উমর রাঃ এর শাসনামলে।
![]() |
সাসানিদ সাম্রাজ্য |
৬৪৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সমগ্র পারসীক সাম্রাজ্য মুসলিম খেলাফতের পতকাতলে চলে আসে। এবং ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় পারস্য সাম্রাজ্য।এর পর প্রায় দুই শতাব্দী ধরে ইরান আরব ইসলামিক সাম্রাজ্যের অধীনে থাকে। ইসলামের খলিফারা প্রথমে মদীনা, ও পরবর্তীকালে সিরিয়ার দামেস্ক ও শেষ পর্যন্ত ইরাকের বাগদাদ থেকে ইরান শাসন করতেন। ৯ম শতাব্দীর শেষে এসে পূর্ব ইরানে স্বাধীন রাজ্যের আবির্ভাব ঘটে এবং ১১শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বাগদাদের আরব খলিফা ইরানের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। ইসলামের ইরান বিজয়ের পর ইরানীরা ধীরে ধীরে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া শুরু করে।
এর
আগে বেশির ভাগ ইরানী সাসানিয় সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রধর্ম জরথুষ্ট্রবাদে বিশ্বাসী ছিল। ১০ম শতকের মধ্যেই ইরানের অধিকাংশ জনগণ মুসলিমে রূপান্তরিত হয়, এবং এদের আধিকাংশই ছিল সুন্নী মুসলিম, তবে
কেউ কেউ শিয়া ইসলামের ভিন্ন ভিন্ন ধারা অনুসরণ করত।
এদের মধ্যে ইসমাইলি নামের একটি শিয়া গোত্র এলবুরুজ পর্বত এলাকার রুদাবার অঞ্চলে ১১শ থেকে ১৩শ শতক পর্যন্ত একটি ছোট কিন্তু স্বাধীন রাজ্যে বসবাস করত।
১৬শ শতকের আগে ইরানের বর্তমান জাফরি শিয়া ইসলাম-ভিত্তিক কোন রাষ্ট্র গঠিত ছিলনা।
![]() |
আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি |
১৫০১ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত রাজতন্ত্রী ইরান হয় পারস্যের সাফাভি বংশের শাহ কিংবা রাজারা শাসন করতেন। মূলত এই সময়ে ইরান শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে পরিণত হয়। উল্লেখ্য, ১৯৩৫ সালে ইরানের এক শাসক দেশটিকে কেবল "ইরান" বলে ডাকার অনুরোধ জানানোর পর থেকে এখন এই নামেই সারা বিশ্বে দেশটি পরিচিত। ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামী বিপ্লব তথা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজতন্ত্রের পতন ঘটে এবং ইরানে একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র স্থাপন করে। এই ইসলামী প্রজাতন্ত্রের বর্তমান ধর্মীয় সর্বোচ্চ নেতা হলেন- আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট হলেন ইব্রাহিম রইসি।
আরও পড়ুন: তুরস্ক, ইতিহাস ও দেশ পরিচিতি
তথ্যসূত্রে:
- মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রকার ইতিহাস - সৈয়দ মোহাম্মদ সালেহ উদ্দীন
- মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস- অটোমান সাম্রাজ্য থেকে জাতিসত্তার রাষ্ট্র - এ বি এম হোসন
- মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস - কে. আলী
- উইকিপিডিয়া, এনসাইক্লোপিডিয়া এবং বিভিন্ন ব্লগ ও ওয়েবসাইট
0 মন্তব্যসমূহ