তাছাড়া তখন মহানবী (স) এর কোন পুত্র সন্তান জীবীত ছিল না এবং তিনি নিজ থেকে কাউকে তার উত্তরসূরি নির্বাচিত করে যান নাই। ফলে তার ওফাতের পর কে মুসলিম উম্মাহ‘র প্রতিনিধিত্ব করবে ? কে ইসলামী রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দিবে? কে খলিফাতুল রাসূল বা রাসূল (স) এর উত্তরসূরি হবে? তা নিয়ে একটি সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন:মহানবীর (স) বিদায় হজ্জের ভাষণ ও ওফাত
প্রসঙ্গত খলিফাতুল রাসূল পদবিকে সংক্ষেপে খলিফা বলা হয়। খালিফা অর্থ হলো প্রতিনিধিত্ব করা বা স্থলাভিষিক্ত হওয়া। খলিফা মানে কোন নবী নয়। ইসলাম আগেই চূড়ান্ত করে দিয়েছে, হযরত মুহাম্মদ (স) সর্বশেষ নবী, তার পরে আর কোন নবী আসবেন না। যেভাবে রাসূল (স) ইতিপূর্বে মদিনাকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন, সেই চেতনাকে ধারণ করে মুসলিমদের নেতৃত্ব দিয়ে যাওয়াই ছিল খলিফার দায়িত্ব।
অন্যদিকে মহানবী (স) এর পর তার আদর্শ প্রচার এবং তার প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করাকে খিলাফত বলা হয়। মহানবী (স) এর ওফাতের পর সৃষ্ট খিলাফতের সমস্যা সমাধানের জন্য আনসার ও মুহাজির সহ অন্যান্য মুসলিম নেতৃবৃন্দ মদিনার ছাফিফা বানি সায়িদা নামক মিলনায়তনে মিলিত হন। উপস্থিত সদস্যদের মধ্যে খিলাফতের প্রশ্নে চারটি দল তৈরি হয়।
প্রথমত, মুহাজিররা দাবি করেন, তারা সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছেন এবং ইসলামের জন্য সর্বপ্রকার ত্যাগ স্বীকার করেছেন। সুতরাং ইসলামের খলিফা হবেন মুহাজিরেদের মধ্য থেকে। দ্বিতীয়ত, আনসারগণও দাবি করেন, তারা ইসলামের দুর্দিনে মহানবী (স) ও মুসলমানদের আশ্রয় দিয়েছেন এবং সর্বোতভাবে সাহায্য করেছেন। তাই আনসারদের থেকে প্রথম খলিফা হওয়া উচিত।
আরও পড়ুন : মহানবীর (স) বংশ কুরাইশ কারা ছিল?
তৃতীয়ত, কুরাইশদের দাবি, হযরত মুহাম্মদ (স) কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেছেন। কুরাইশ বংশ প্রাচীন কাল থেকে মক্কাকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। ফলে প্রথম খলিফা কুরাইশদের মধ্যে থেকে হওয়া উচিত। চতুর্থত, হযরত আলী (রা) এর সমর্থকরা দাবি করেন, আলী (রা) মুহানবী (স) এর চাচাতো ভাই এবং তার একমাত্র জীবীত কন্যা ফাতেমা (রা) এর স্বামী। সুতরাং মহানবী (স) এর যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে আলী (রা) কে খলিফা বানানো উচিত।
এভাবে খেলাফতকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক জটিলতা চরমে পৌছালে হযরত আবু বকর (স) দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন, `` ইসলামের যুগসন্ধিক্ষণে আনসারদের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতে কেবল কুরাইশদের থেকে কোন ব্যাক্তিকেই আরবের লোকেরা খলিফা বলে মেনে নিবে। কুরাইশ বংশে মহানবী (স) এর জন্ম। কুরাইশদের প্রভাব-প্রতিপত্তি, শৌরয-বীরয, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ক্ষমতার কথা স্মরণ করে দিয়ে , আবু বকর (র) কুরাইশদের পক্ষ থেকে খলিফা নির্বাচনের মতামত ব্যক্ত করেন। এর প্রেক্ষাপটে আনসাগণ পৃনরায় প্রস্তাব করেন, কুরাইশ ও আনসারদের মধ্য থেকে দুইজন খলিফা নির্বাচিত করা হউক।
আরও পড়ুন : মহানবীর (স) মদীনা হিজরত
হযরত ওমর (রা) এর প্রতিবাদ করে বলেন, এক খাপে দুইটি তরবারির স্থান হতে পারে না। দুইজন খলিফা নির্বাচিত হলে মুসলিম উম্মাহের ঐক্য বিনিষ্ট হবে। অতপর অনৈক্য, অরাজকতা ও অচলাস্থা দুরীকরনের জন্য হযরত আবু বকর (রা) বিখ্যাত সাহাবী আবু উবায়দা (রা) অথবা ওমর (রা) খলিফার দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন।
কিন্তু হযরত উমর ও আবু উবায়দা (রা) বয়স, পদমরযদা ও সম্মান বিবেচনা করে হযরত আবু বকর (রা) কে মদিনা রাষ্ট্রের পরবর্তী নেতা ও খলিফা হওয়ার ঘোষণা দেন এবং তার হাতে বাইআত গ্রহণ করেন। এরপর আবু উবায়দা, আব্দুর রহমান, উসমান, আলী (রা) সহ সকল আনসার, মোহাজীররা আবু বকর (রা) কে খলিফা হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এভাবে আবু বকর (রা) খলিফতুল রাসূল বা রাসূলের উত্তরসূরী অর্থাত খলিফা নির্বাচিত হন এবং এর মাধ্যমে মুসলিম জাতি খলিফা নির্বাচনের সংকট থেকে মুক্তি পায়।
হযরত আবু বকর (রা) এর খালিফা নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে খুলাফায়ে রাশিদিন তথা ইসলামের সোনালী যুগের অধ্যায়ের সূচনা হয়। ইসলামের ইতিহাসে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬৬১ খ্রিস্টাব্দ পরযন্ত চারজন খলীফা অর্থাত হযরত আবু বকর, ওমর, উসমান এবং আলী (রা) এর শাসনকালকে রাশিদিন খেলাফত হিসেবে অভিহিত করা হয়।
আরও পড়ুন : উসামার নেতৃত্বে আবু বকরের (রা) প্রথম যুদ্ধ অভিযান
💻তথ্যের উৎস:
📌ইসলামের ইতিহাস- সৈয়দ মাহমদুল হাসান 📌ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি- সৈয়দ মাহমুদুল হাছান 📌ইসলামের ইতহিাস- মুহাম্মদ মিজানুর রশিদ 📌আরব জাতীর ইতিহাস- শেখ লুতফর রহমান 📌দ্যা লস্ট ইসলামিক হিস্ট্রি- ফিরাস আল খতিব 📌আবু বকর সিদ্দিক (রা)- ড. আলি মুহাম্মদ সাল্লাবি 📌খিলাফতে রাশেদা- মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুর রহিম
0 মন্তব্যসমূহ