সুদান : উত্তর আফ্রিকার যুদ্ধ বিদ্ধস্ত মুসলিম দেশ

                                                                            

সুদান আফ্রিকা মহাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি রাষ্ট্র। এর উত্তরে মিশর, পূর্বে লোহিত সাগর, ইরিত্রিয়া, ও ইথিওপিয়া, দক্ষিণে দক্ষিণ সুদান, পশ্চিমে চাদ। আফ্রিকার তৃতীয় বৃহত্তম দেশ এটি। নীল নদ এই দেশটিকে দুই ভাগে ভাগ করেছে। এর রাজধানী ও বৃহত্তম শহর খার্তুম। সুদানকে ১৮ টি রাজ্য এবং ১ টি এলাকাকে বিশেষ প্রশাসনিক মর‌্যাদায় বিভক্ত করা হয়েছে। এলাকাটি হলো- আবেই অঞ্চল, যেটি মূলত সুদান ও দক্ষিণ সুদান উভয়েরই অংশ বলে বিবেচিত।

সুদানের আয়তন প্রায় ১৮ লাখ ৮৬ হাজার বর্গকিলোমিটার, জনসংখ্যা প্রায় ৪ কোটি। দেশটির রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম, দাপ্তরিক ভাষা আরবি ও ইংরেজি, মুদ্রা সুদানি পাউন্ড। সুদানের আইনসভা ন্যাশনাল লেজিসলেচার দ্বি- কক্ষ বিশিষ্ট। উচ্চকক্ষ কাউন্সিল অব স্টেট, এবং নিন্মকক্ষ ন্যাশনাল আ্যাসেম্বলি। সুদান একসময় কুশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাঁরা  সুদানে দীর্ঘদিন ক্ষমতাসীন থাকেন। কুশের পর নুবিয়ান সাম্রাজ্য শুরু হয়। 

আরও পড়ুন:তুর্কি জাতির হারানো দেশ তুর্কিস্থান                             

তাদের সময়ই আরব মুসলমানরা সুদানে আসতে শুরু করেন। আরব বিজয়ীরা নুবিয়াতে বহুবার সেনা অভিযান পরিচালনা করে শেষ পর্যন্ত মিসরের নুবিয়ানদের সাথে একটি চুক্তি করেন। এ চুক্তি-পরবর্তী ৬৮৭ বছর টিকে ছিল। এ সময় দুই অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ অনেক বেড়ে যায়। পারস্পরিক বিবাহ, আরব বণিক, বসতি স্থাপনকারীদের মাধ্যমে সর্বোপরি ইসলামের সুমহান আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সেখানে ধীরে ধীরে ইসলাম ধর্মের প্রসার ঘটে। ১০৯৩ সালে সর্বপ্রথম একজন মুসলিম শাসক নুবিয়ার ক্ষমতায় আসেন।                            

ফান্জ সালতানাত

পঞ্চদশ শতকে  সুদানে মুসলিম ফাঞ্জ সালতানাত প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পর ১৮২০ সালে মিসরের ওসমানীয় শাসক মোহাম্মদ আলী সুদান দখল করে। পরবর্তীতে ১৮৮২ সালে উসমানীয় ও মিশরীয়দের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ব্রিটিশরা মিসর দখল করে এবং স্বাভাবিকভাবে সুদানও ব্রিটিশদের দখলে চলে যায়। এই সময় থেকে ব্রিটিশরা কৌশলগতভাবে মিশর ও সুদানে ইঙ্গ-মিসরীয় শাসনের সূত্রপাত করে। তখন শুরু হয় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন। এতে নেতৃত্ব দেন মুহাম্মদ আহমদ ইবনে আবদ আল্লাহ। এর ফলে ১৮৮৫ সালে সুদান থেকে প্রত্যাহার করা হয় মিসরীয় ও ব্রিটিশ সৈন্য।


আরও পড়ুন: ইরকা: ইতিহাস ও দেশ পরিচিতি  

১৮৯০ সালে ব্রিটিশরা সুদানে আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে বহু চেষ্টার পর ব্রিটিশরা ১৮৯৯ সালে ইঙ্গ-মিসরীয় সুদান প্রতিষ্ঠা করে এর ফলে সুদান শাসনের ভার এক মিসরীয় গভর্নরের হাতে ন্যস্ত হয় যদিও গভর্নর ব্রিটশিদের অনুগত থাকতো সুদান সময় মূলত ব্রিটিশ কলোনি হিসেবে পরিচিত ছিল১৯২৪ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশরা সুদানকে দুটি ভাগে ভাগ করে শাসন করত দেশটির উত্তরাঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের এবং দক্ষিণাঞ্চলে খ্রিষ্টানদের আধিপত্য টিকিয়ে রেখে

জানুয়ারি ১৯৫৬ সালে ইসমাইল আল আযাহারীর নেতৃত্বে সুদান ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে ১২ নভেম্বর ১৯৫৬ সালে জাতিসংঘে যোগদান করে দেশটি স্বাধীনতাকামী দল ইউনিয়ানিস্টি দল দেশটিতে প্রথম মন্ত্রীসভা গঠন করেন এবং ইসমাইল আল আযহারী হন দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট ১৯৫৮ সালে দেশটিতে অর্থনৈতিক বিপরর্যয় রাজনৈতিক অস্বস্থিশীলতা দেখা দেয়

এই অবস্থায় সুদানের ইতিহাসে প্রথম সামরিক অভ্যূত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন সেনাপ্রধান জেনারেল ইবরাহীম আব্বুদ পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালে কর্নেল ওমর আল বশির এক অভ্যুত্থানের  মাধ্যমে দেশটির ক্ষমতায় আসেন তিনি ১৯৯৬ সালে নিজেকে সুদানের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন এবং দেশে ইসলামী আইন চালু করেন এর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র সুদানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে

                                     

জুলাই ২০১১ সালে দেশটি ভেঙে স্বাধীন হয়ে যায় যায় খ্রিস্টান অধ্যুষিত অঞ্চল দক্ষিণ সুদান এরপর দেশটির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটতে শুরু করে কারণ তেলের খনিগুলো বেশির ভাগই দক্ষিণ সুদানে অবস্থিত অবশেষে প্রায় ৩০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরকে গত ১৩ এপ্রিল ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী

পরে তাঁকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে এর পর দেশটিতে একটি অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়, যার সরকার প্রধান তথা প্রধানমন্ত্রী হলেন, আবদাল্লা হামাদ দীর্ঘ ১৭ বছরেরও বেশী সময় ধরে চলে আসা গৃহযুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে গত সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে বিদ্রোহী জোটের সাথে ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি সই করেছে দেশটির অস্থায়ী সরকার হয়ত এই শান্তিচুক্তির মাধ্যমে সুদানের শান্তি ফিরে আসবে এবং নীল নদের আবহমান জলস্রোতের মত অনাদিকাল শান্তির সুবাতাস বইতে থাকবে এইযুদ্ধ কবলিত দেশটিতে

আরও পড়ুন:তুরস্কের ইতিহাস এবং পরিচিতি

               ভিডিও দেখুন:

                                           

              তথ্যসূত্রে:

  • মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রকার ইতিহাস - সৈয়দ মোহাম্মদ সালেহ উদ্দীন
  • মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস- অটোমান সাম্রাজ্য থেকে জাতিসত্তার রাষ্ট্র - এ বি এম হোসন 
  • মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস - কে. আলী
  • উইকিপিডিয়া, এনসাইক্লোপিডিয়া এবং বিভিন্ন ব্লগ ও ওয়েবসাইট

                

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ