তায়েফের যুদ্ধের ইতিহাস : মহানবীর (স) শেষ অভিযান

                                                                     

                                               

ভিডিও দেখুন

৬১৯ খ্রিস্টাব্দে বিবি খাদিজা (রা) এবং চাচা আবু তালিব ইন্তেকাল করলে মহানবী (স) এর জীবনে 
বিপরর‌্যয় নেমে আসে। কেননা বিবি খাদিজা (রা) মানসিক শক্তি এবং আবু তালিব নিরাপত্তা প্রদান করতেন মহানবী (স) কে। আবু তালিবের মৃত্যুর পর বানু হাসিম গোত্রের প্রধান হন আবু লাহাব। কিন্তু কাফের আবু লাহাব ভাতিজা মুহাম্মদ (স) কে তার নিরাপত্তা থেকে বের করে দেন।

ফলে মহানবী (স) এর উপর মক্কার কাফেররা অমানুষিক নিরযাতন ও নিপিড়ন শুরু করেন এবং ইসলাম প্রচারে বাধা প্রদান করে । এ অসহায় অবস্থায় মহানবী (স) নিজ পালক পুত্র যায়েদ বিন হারিসকে (রা) সাথে নিয়ে আশ্রয় ও ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে তায়েফ গমন করেন। কিন্তু বিপথগামী তায়েফবাসী আশ্রয় প্রদান ও ইসলাম গ্রহনের পরিবর্তে মহানবী (স) কে পাথর নিক্ষেপ করে রক্তাক্ত করে শহর থেকে বিতাড়িত করেন।

অপমান ও লাঞ্চনা সহ্য করেও তিনি তায়েফ বাসীকে অভিশাপ দেন নি, বরং আল্লাহর কাছে তাদের হেদায়ত প্রার্থনা করেছেন। কারণ মুহাম্মদ (স) জানতেন একদিন এই তায়েপ বাসী ইসলামের আলোতে উদ্ভাসিত হবে। মহানবীর (স) সেই ধারণা অবশেষে ১০ বছর পর সত্যি হলো।

তায়েফ ছিল হুনাইন উপত্যকার অদূরবর্তী একটি অঞ্চল। তখনকার দিনে তায়েফের দুর্গ খুব সুরক্ষিত ছিল। সুদক্ষ তীরন্দাজ হিসেবে তায়েফবাসীর সুনাম ছিল। তাছাড়া তারা এক প্রকার আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার জানতো, ফলে তায়েফ বিজয় করা ছিল সবার জন্য দু:সাধ্য একটি বিষয়। এই তায়েফেই হুনাইনের যুদ্ধে পরাজিত কাফেররা আশ্রয় গ্রহণ করে।

                                               

তাই হুনায়েন বিজয়ের পর এবার মহানবী (স) তায়েফের দিকে দৃষ্টি দিলেন। তায়েফ বিজয়ের উদ্দেশ্যে তিনি প্রথমে আবু মুসা (রা) এর সেনাপতিত্বে একটি বিশাল সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন। এরপর মুহাম্মদ (স) নিজেই তায়েফের অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। তিনি তায়েফের দুর্গের কাছাকাছি অবস্থান করে তাবু স্থাপন করেন। এরপর মুসলিম বাহিনী তায়েফ দুর্গে অভিযান শুরু করে।

কিন্তু তায়েফবাসী দুর্গের দরজা এমনভাবে বন্ধ করে দিল যে, মুসলিম সেনারা ভিতরে ঢুকতে পারলো না। উভয় পক্ষ থেকে তীর নিক্ষেপ শুরু হয়। দুর্গের ভিতর থেকে তায়েফের সৈন্যরা বিশেষ ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে থাকে। এর ফলে কয়েকজন সাহাবী শাহাদাত বরন করেন। এরপর ১৮ দিন মুসলিম বাহিনী দুর্গ অবরোধ করে রেখেছিল।

অবরোধের পরও মুসলিম বাহিনী যখন তায়েফ দুর্গ বিজয় করতে সক্ষম হচ্ছিল না , তখন মুহাম্মদ (স) ঘোষনা দেন, দুর্গের বাহিরে আসলে যে কোন ব্যক্তিকে মুক্ত করে দেওয়া হবে। কিন্তু কোন কৈাশলই কাজে লাগলো না। শুধুমাত্র অল্প কয়েকজন লোক দুর্গ থেকে পালিয়ে এসে মুহাম্মদ (স) এর নিকট ইসলাম কবুল করেন।

তায়েফ অবরোধ করতে গিয়ে মোট ১২ জন সাহাবি শাহাদাত বরন করেন। বেশ কয়েকজন সাহাবি আহত হন। অবশেষে মহানবী (স) অবরোধ দিয়ে নয় বরং তায়েফ মুক্ত করে তায়েফবাসীকে মুক্ত করে দিয়ে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার কৌশল অবলম্বন করেন। এ জন্য তিনি অবরোধ প্রত্যহার করে তায়েফ ত্যাগ করে জিরনা নামক স্থানে তাবু স্থাপন করেন।

এবার মহানবী (স) এর গৃহীত কৌশলটি কাজে লাগলো। তায়েফবাসী জানতো অপ্রতিরোদ্ধ মুসলিম বাহিনীকে তারা দমিয়ে রাখতে পারবে না। তাছাড়া তারা মহানবী (স) এর মত নেতৃত্বেও আর দ্বিতীয় কাউকে পাবে না। তাই তারা নিজেদের ক্ষোভ ও অহংকার পরিত্যাগ করে ইসলামের পতাকাতলে আশ্রয় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।                                             

জিরনাতে অবস্থান কালে বনি হাওয়াজিন গোত্রের একটি প্রতনিধিদল মহানবী (স) এর সাথে সাক্ষাত করতে আসে। এবং মহানবী (স) এর নিকট আবেদন জানায় হুনায়নের যুদ্ধে তাদের যে কজন লোক মুসলমানদের হাতে বন্দি হয়েছে তাদের যেন মুক্ত করে দেওয়া হয়। মহানবী (স) শত্রু হওয়া সত্ত্বেও প্রতিনিধি দলের সাথে ভালো ব্যবহার করেন এবং তাদের বন্দিদের মুক্ত করে ফিরিয়ে দেন।

মহানবী (স) এর মহানুভবতা দেখে তায়েফবাসী মুগ্ধ হয়ে যায়। এরপর মহানবীর (স) সাথে সাক্ষাত করে ইসলাম কবুল করেন। এভাবে এক এক করে অধিকাংশ তায়েফবাসী ইসলাম গ্রহণ করেন এবং হযরত মুহাম্মদ (স) বিনা রক্তপাতে মক্কার মত তাযেফ বিজয় লাভ করেন।

                                                 

 তথ্যের উৎস সমূহ:

* আর রাহীকুল মাখতুম-

        লেখক : আল্লামা ছফিউর রহমান মোবারকপুরী

         অনুবাদ : খাদিজা আখতার রেজায়ী।

১. আরব জাতির ইতিহাস - শেখ মুহাম্মদ লুৎফর রহমান ।

২. ইসলামের ইতিহাস - মোঃ মাহমুদুল হাছান 

৩. ইসলামের ইতিহাস  ডঃ সৈয়দ মাহমুদুল হক ।
৪. বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ব্লগের পোস্ট  

                                            


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ