মহানবীর (স) গোপনে ইসলাম প্রচার : মক্কায় প্রথম ইসলাম গ্রহণকারীরা |

                                                   
পূর্বের অংশ পড়ুন : মুহাম্মদ (সঃ) নবুয়ত লাভ : ইসলামের প্রবর্তক বিষয়ে ভুল ধারণার নিরসন 
মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর খলীফা বা প্রতিনিধি করে। মানুষকে তিনি সৃষ্টি করেছেন শুধু মাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্য। মানুষকে তিনি দান  করেছেন পথ চলার দিশা। হযরত আদম (আঃ) থেকে আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) পর্যন্ত প্রায় এক লাখ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লাখ চব্বিশ হাজার নবী-রসূল পৃথিবীতে এসেছেন মানুষকে সঠিক পথে চলার দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য। আল্লাহ্ তায়ালা মানুষকে দান করেছেন দীন বা জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম আল্লাহর দেয়া একমাত্র জীবন ব্যবস্থা, যা হযরত আদম (আ.) হতে প্রচারিত হতে হতে প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর দ্বারা পূর্ণতা লাভ করে।


মহানবী (স.) পৃথিবীতে আবির্ভূত হন সমগ্র মানবজাতির জন্য, তিনি আবির্ভূত হন বিশ্ব জগতের জন্য রহমতরূপে। তিনি আবির্ভূত হন সিরাজাম মুনীরারূপে অর্থাৎ প্রদীপ্ত চেরাগরূপে। মহান আল্লাহ্ পবিত্র আল কুরআনের সূরা আহযাবের ৪৫ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, হে নবী, নিশ্চয়ই আপনাকে প্রেরণ করা হয়েছে সাক্ষ্যদাতারূপে, সুসংবাদদাতারূপে, সতর্ককারীরূপে এবং আল্লাহর দিকে তাঁরই অনুমতিক্রমে আহ্বানকারীরূপে এবং প্রদীপ্ত চেরাগরূপে। ।

একদা ৪০ বছর বয়সে ৬১০ খ্রি. হজরত মুহাম্মদ (সঃ) নবুয়তপ্রাপ্ত হন এবং হেরা পর্বতের গুহায় তার কাছে প্রথম অহি নাজেল হয়। প্রথম প্রত্যাদেশ প্রাপ্তির পর তিনি গভীরভাবে বিচলিত হয়ে পড়লেন। কম্পিত ও ভীত-সন্ত্রস্ত মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সঃ) তার স্ত্রী বিবি খাদিজাকে (রা.) সব ঘটনা বর্ণনা করলেন। ঘটনা শ্রবণের পর পবিত্রতা রমণী খাদিজা (রা.) বুঝতে পারলেন যে, তার স্বামীর ওপর মহান সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ বর্ষিত হয়েছে। তিনি তাকে সাহস ও উৎসাহ দান করলেন।

অতঃপর তিনি তার চাচাতো ভাই ওয়ারাকা-বিন-নওফেলের কাছে এ সংবাদ পেঁৗছালেন। ওয়ারাকা ছিলেন তৎকালীন আরব বিশ্বের প্রখ্যাত পণ্ডিত। ইহুদি ও খ্রিস্টধর্ম সম্বন্ধে তাকে বিশেষজ্ঞ বলে ভাবা হতো। এ ঘটনা শ্রবণে তিনি অভিমত ব্যক্ত করলেন যে, মুসা (আ.) ও ঈসা (আ.) অনুরূপ ঐশীবাণী লাভ করেছিলেন। ওয়ারাকা মহানবী সঃ কে অবিশ্বাসীদের সম্বন্ধে পূর্ব থেকে সাবধান করে দেন। তাঁর এ উৎসাহসূচক কথাবার্তা ও আশ্বাসের বাণীতে মহানবী (সঃ) স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। ওয়ারাকার আশ্বাসবাণী ও বিবি খাদিজা রাঃ এর উৎসাহ ও প্র্রভাব হযরতকে দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়ের সূচনা করে।

 

৬১০ খ্রিঃ ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত প্রাপ্তির পর মহানবী সঃ ইসলাম ধর্ম প্রচারে মনোযোগি হলেন। পবিত্র কোরআনের সূরা আল মায়েদার ৬৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, হে আমার রাসূল, যা কিছু তোমার উপর নাযিল করা হয়েছে তা তুমি (অন্যের কাছে) পৌছে দাও”। এরপর হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বিপথগামী মক্কাবাসীর কাছে ইসলাম প্রচার করতে শুরু করলেন। ৬১০ থেকে ৬১৩ খ্রিঃ পর‌্যন্ত মহানবী সঃ মহান আল্লাহর নির্দেশে গোপনে ইসলাম প্রচার করেন। তিনি আরবাসীকে পৌত্তলিকতা হতে বিরত হয়ে সত্যধর্ম গ্রহণের দাওয়াত দিয়ে বললেন, 'আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়, তিনি স্রষ্টা ও সৃষ্টিকর্তা। তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যুর মাধ্যমে তিনি আবার তা ফিরিয়ে নেন। তার মতো আর কেউ নেই।

সর্বপ্রথমে মহানবী (সঃ)রতাঁর অন্তরঙ্গ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের কাছে অত্যন্ত গোপনে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। বিবি খাদিজাই (রা.) প্রথম তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন। তিনি প্রথম মক্কাবাসীদের মধ্যে ইসলাম গ্রহণকারী মহিলা। এর পর যদিও আলী ও জায়েদ ছিলেন মহানবী (সঃ) এর ঘনিষ্ঠ সহযোগী, কিন্তু আবু বকর রাঃ বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। শীঘ্রই খাদিজা, আবুবকর, আলী ও যায়েদসহ বিশজন লোক ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে দীক্ষা দেন আবুবকর।

তারা হলেন পরবর্তীকালে পারস্য বিজেতা সা'দ-বিন-আবি ওয়াক্কাস, যুবাইর ইবনে আল-আওয়াম, ইসলামের তৃতীয় খলিফা ওসমান-বিন-আফফান, পরবর্তীকালে ইসলামের বীর যোদ্ধা তালহা এবং সম্পদশালী ও মহৎ চরিত্রের অধিকারী আবদুর রহমান-বিন-আউফ। আবদুর রহমান আরও চারজন মুসলমানকে ইসলামের ছায়াতলে সমবেত করেন। তাদের মধ্যে সিরিয়া বিজেতা আবু ওবায়দা ইবনে আল-জাররাহও ছিলেন। এসব নবদীক্ষিত মুসলমানদের মধ্যে যায়েদ ব্যতীত সবাই কুরাইশ বংশের লোক ছিলেন।

তাদের মধ্যে কয়েকজন ক্রীতদাসও ছিলেন, যেমন ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন হজরত বেলাল, 'ক্ষুদ্রদেহী অথচ প্রগাঢ় বিশ্বাসী' নামে খ্যাত হজরতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহাবা আবদুল্লাহ-বিন-মাসুদ প্রমুখ।
তিন বছরে গোপনে ধর্ম প্রচার করলে নব-দীক্ষিত মুসলমানদের সংখ্যা পৌছায় ত্রিশের কৌটায়। এরপর মহান আল্লাহর নির্দেশে ৬১৩ খ্রিঃ থেকে হযরত মুহাম্মদ সঃ প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। এর ফলে মুসলমানদের সংখ্যা দিনদিন বাড়তে থাকে।

পরবর্তী অংশ পড়ুন : মহানবী (সঃ) এর প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার ।

তথ্যের উৎস সমূহ:

১. আরব জাতির ইতিহাস - শেখ মুহাম্মদ লুৎফর রহমান ।
২. ইসলামের ইতিহাস - মোঃ মাহমুদুল হাছান 
৩. ইসলামের ইতিহাস  ডঃ সৈয়দ মাহমুদুল হক ।
৪. বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ব্লগের পোস্ট ।
                                                   

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ