আবারাহা বাদশাহের কাবা আক্রমণ ও পরাজয়ের ইতিহাস |

                                              


ইসলাম ধর্মের প্রচার এবং প্রসারের শুরু থেকেই সমগ্র মুসলিম জাতির কাছে এক আবেগ এবং অনুভূতির নাম পবিত্র কাবাঘর। কাবাঘরের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় এবং মহান আল্লাহর প্রতি মাথানত করে সমস্ত পৃথিবীর মুসলমান সম্প্রদায়। আর পবিত্র কাবাঘরকে কেন্দ্র করে কাবার চারদিকে ঘিরে গড়ে উঠছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ উপাসনালয় মসজিদ আল হারাম বা পবিত্র মসজিদ।

একদা এই পবিত্র কাবা ঘরকে কেন্দ্র করে যুদ্ধ হয়েছিল তৎকালীন ইয়ামেনের শাসক আবরাহা এবং আল্লাহর পাঠানো আবাবিল পাখির মধ্যে। আবারাহা হাতি ও বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে, কাবা ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আক্রমণের সেই ঘটনা বর্ণিত হয়েছে পবিত্র কুরআনের সূরা ফিল-এ। অধিকাংশের মতে, মহানবী (সা.)-এর জন্মের বছর অর্থাৎ ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে এ ঘটনা ঘটেছিল। উল্লেখ্য, আবরাহার শাসনকাল ৫২৫-৫৭০ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। আবেসিনিয়ার বাদশাহ নাজ্জাশীর সেনাপতি হিসেবে তার উত্থান হয়। পরে সে প্রথমে গভর্নর ও পরে স্বাধীন রাজা হিসেবে ইয়েমেনে শাসন কাজ পরিচালনা করেছিল।

খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী আবরাহা তৎকালে মূর্তিপূজা ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের জন্য বিখ্যাত কাবাঘরের প্রভাব-প্রতিপত্তির ও গৌরব নষ্ট করার জন্য নিজ দেশ ইয়েমেনের সানা শহরে আল ফালিস নামের একটি গীর্জা নির্মাণ করেন। নিজের গড়া গীর্জার প্রতি আরও মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য আবরাহা কাবা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় তথা মক্কায় দুজন উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি পাঠান।
আরও পড়ুন: প্রাচীন উত্তর আরব ও মক্কার নেতৃত্ব

মক্কাবাসীর মধ্যে থেকে দুই ভাই খুজা ও কায়েস আবরাহার গীর্জার প্রতি আগ্রহী হয়। আবরাহার পরামর্শ ও উৎসাহে উক্ত দুই ভাই মক্কার আশপাশের মানুষকে আবরাহার গীর্জায় যেতে বলে। এতে কাবা অনুরাগীরা রাগান্বিত হন এবং একভাইকে মেরে ফেলে। অন্য ভাই পালিয়ে ইয়েমেন যায় এবং সব ঘটনা আবরাহাকে খুলে বলে।

তদুপরি কাবা পূজারি এক ভক্ত গোপনে আবরাহারের চার্চে যায় এবং তা অপরিষ্কার ও অপবিত্র করে আসে। এতে ক্রুদ্ধ আবরাহা প্রায় ৪০ হাজার সৈন্য এবং বেশ কিছু হাতি নিয়ে কাবা আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। আবরাহা তার বিশাল বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হলে পথে পথে স্থানীয় আরব গোত্রদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা আবরাহার কাছে পরাজিত হয়। তখন মক্কার শাসক ছিলেন কুরাইশ বংশের নেতা এবং মহানবী (সঃ) এর দাদা আব্দুল মুত্তালিব। তিনি বিশাল বাহিনীর মোকাবেলা করতে ব্যার্থ হয়ে, আল্লাহর ঘর আল্লাহর কাছে আমানত রেখে, তার গোত্রদের নিয়ে পাহাড়ে আশ্রয় নিলেন।

এ যুদ্ধের পরবর্তী অংশের বর্ণনা রয়েছে পবিত্র কোরআনের ১০৫ নং ‘সূরা ফিল’-এ। এ সূরার প্রথম অংশে দুটি প্রশ্ন রাখা হয়, ‘তুমি কি দেখনি তোমার প্রতিপালক হস্তীবাহিনীর প্রতি কী করেছিলেন? তিনি কি ওদের (অর্থাৎ আবরাহার বাহিনীর) কৌশল ব্যর্থ করে দেননি?’ এই প্রশ্ন দুটির উত্তর রয়েছে সূরার শেষ তিনটি আয়াতে। যেখানে বলা হয়েছে আবরাহার বাহিনীকে ধ্বংস করার জন্য মহান আল্লাহ ঝাঁকে ঝাঁকে ‘আবাবিল’ নামে ক্ষুদ্রাকৃতির পাখি পাঠান।

আরও পড়ুন: মহানবীর (স.) জন্ম ও বংশ পরিচয়

বর্ণনা মতে এ সময় আকাশ কালো করা মেঘের মতো অসংখ্য আবাবিল পাখি আবরাহার বাহিনীর ওপর দিয়ে ওড়ে যায়। এসব পাখির ঠোঁটে ছিল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কঙ্কর ও পাথর, যা পাখিগুলো আবরাহার বাহিনীর ওপর ফেলেছিল। এর ফলে আবরাহার বাহিনীর কী অবস্থা হয়েছিল তার বর্ণনা রয়েছে সূরার শেষ আয়াতে। এখানে বলা হয়েছে, আবরাহার সব হাতি ও অন্যান্য সৈন্যদের অবস্থা হয়েছিল পশুর খাওয়া ভুসির মতো।

উল্লেখ্য, আবারাহার সম্পূর্ণ বাহিনী বিদ্ধস্ত হওয়ার পর আবরাহা নিজেও এসব খোদায়ি ঢিলের আঘাতে আহত হয় এবং ইয়েমেনে পালিয়ে যায়। ইয়েমেনেই সে মারা যায়। অতঃপর মহান আল্লাহ কর্তৃক পাঠানো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাখির দলের কাছে পরাজিত হলো, তৎকালীন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী শাসক ও তার বিশাল সৈন্যদল।

তথ্যের উৎস সমূহ:

১. আরব জাতির ইতিহাস - শেখ মুহাম্মদ লুৎফর রহমান ।

২. ইসলামের ইতিহাস - মোঃ মাহমুদুল হাছান 

৩. ইসলামের ইতিহাস  ডঃ সৈয়দ মাহমুদুল হক ।

৪. বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ব্লগের পোস্ট ।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ