পূর্বের অংশ পড়ুন : মহানবী (সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্বে পৃথিবীর অবস্থা ।
একদা মহান আল্লাহ পাক ক্তৃক প্রেরিত হযরত আদম আঃ, ইব্রাহীম
আঃ, দাউদ আঃ, মুসা আঃ, ঈসা আঃ এবং আরও অসংখ্য নবী-রাসূলগণ: মানুষের সর্ববিধ উন্নতি
ও মঙ্গলের জন্য যে মহান ধর্ম ও আদর্শ মানবজাতীকে শিখিয়েছিলেন, সে পথ ও আদর্শ হতে বিচ্যুত
হয়ে মানবকূল এক অন্ধকারাচ্ছন্ন ও অভিশপ্ত অবস্থায় পতিত হয়েছিল। পারস্যবাসী এক ইশ্বরে
বিশ্বাস না করে মঙ্গলামঙ্গলের জন্য দু দেবতায় বিশ্বাস করত।
পাক-ভারত উপমহাদেশে হিন্দু সমাজে তেত্রিশ কোটি দেব-দেবীর
পূজা চলত। চীনবাসিগণ নর ও নৃপতির পূজায় নিমগ্ন ছিল। ইহুদিগণও ধর্মগুরুর প্রদশ্রিত পথ ও একেশ্বরবাদিতা ভুলে গিয়ে অভিশপ্ত জীবন-যাপন করত।
অনুরুপভাবে খ্রিস্টানগণও হযরত ঈসা আঃ কর্তৃক প্রচারিত ইসলাম ধর্মের আদর্শ হতে বিচ্যুত
হয়ে ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসী হয়ে পড়ে। তাছাড়া অপসংস্কৃতির ঘোর অন্ধকারে যখন তামাম পৃথিবী সয়লাব,
মানবসমাজে মনুষ্যত্ব ও মানবতা যখন ধুলায় মিশ্রিত, সমাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয়
অবস্থা যখন করুণ।
যখন সমগ্র মানবজাতি বিশেষ করে আরব জাতি পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদের আদর্শ
ভুলে গিয়ে অনাচার, অবিচার, অন্যায় ও অত্যাচারে ডুবে গিয়েছিল। যখন সমগ্র মানবজাতীর জীবন
ধারা, রীতি-নীতি এবং বিশেষ করে ধর্মীয় ধ্যান ধারণা ছিল পাপ ও কুসংস্কারে নিমজ্জিত।
পাপ-পঙ্কিল সমাজ ব্যবস্থা, কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মীয় মতবাদ, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা,
অভিশপ্ত বর্ণ প্রথা ইত্যাদি যখন সমগ্র মানবজাতীকে ধ্বংসের ধারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল।
এরুপ পরিস্থিতিতে খোদায়ী হস্তক্ষেপ ছাড়া ঐসব ভয়াবহ ও মারাত্মক
অবস্থা হতে বিশ্ব মানবকুলের বিশেষ করে আরববাসীর উদ্ধারের আর কোন পথই ছিল না। এই চরম
দুর্গতিসম্পন্ন মানবজাতিকে ন্যায় ও সত্যের পথে পরিচালিত করার জন্য একজন মহাপুরুষের
আবির্ভাব অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। তাই একজন মহান ত্রাণকর্তার আবির্ভাবের কামনায় সমগ্র
বিশ্ব যে গভীর আগ্রহে প্রতিক্ষা করছিল।
ঐতিহাসিক সৈয়দ আমীর আলীর ভাষায়, “ পৃথিবীর ইতিহাসে পরিত্রাণকারীর
আবির্ভাবের এত বেশি প্রয়োজন এবং এমন উপযুক্ত সময় অন্যত্র অনুভূত হয় নাই। অবশেষে মহান
আল্লাহ মানব জাতিকে হেদায়েতের জন্য সর্বকালের সর্বসেরা মহামানব হযরত মুহাম্মদ সঃ কে
সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী-রাসূল হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। শুধু আরবের জন্য নই,
বরং সমগ্র বিশ্বে কুসংস্কারের কুহেলিকা ভেদ করে তৌহিদের বাণী প্রচার করার জন্য তিনি
পৃথিবীর প্রাণ কেন্দ্র খ্যাত আরব উপদ্বীপের মক্কা নগরীর বিখ্যাত কুরাইশ বংশে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে
১২ রবিউল মাসে রোজ সোমবারের জন্মগ্রহণ করেন।
মহানবী (সঃ) এর আবির্ভাবের প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে খ্রিস্টান ঐতিহাসিক পি.কে হিট্টি যথার্থভাবে মন্তব্য করেছেন, “ Anarchy prevailed in the political realm as it did in the religious, the stage was set, the moment was psychological, for the rise of a great religious and national leader . অর্থাৎ “ রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে অরাজকতা বিরাজমান ছিল। একজন মহান ধর্মীয় ও জাতীয় নেতার অভ্যুদ্যয়ের সময় উপযোগী ছিল, মঞ্চও প্রস্তুত হয়েছিল।
মহানবী সঃ কে পৃথিবীতে প্রেরণের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে মহাগ্রন্থ কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, তিনিই হচ্ছেন সেই মহান সত্তা, যিনি তাঁর রাসুল সঃ-কে যথার্থ পথনির্দেশ ও সঠিক জীবনবিধান দিয়ে পাঠিয়েছেন, যাতে করে আল্লাহর রাসূল দুনিয়ার অন্য সব বিধানের উপর একে বিজয়ী করে দিতে পারে, সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালাই যথেষ্ট। [ সূরা আল ফাতাহ, আয়াত নং ২৮} এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ আরও বলেন, আর আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সমগ্র মানবতার জন্য সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী হিসেবে; কিন্তু তা অধিকাংশ মানুষ জানেনা ” [ সূরা আস সাবা, আয়াত নং ২৮]
এমনকি মহানবী সঃ এর আবির্ভাবের পূর্বভাস আগের সব নবীকে দেওয়া
হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, স্মরণ করো, যখন আল্লাহ নবীদের কাছ থেকে অঙ্গীকার
গ্রহণ করেন যে, আমি কিতাব ও জ্ঞান-প্রজ্ঞা যা কিছু তোমাদের দান করেছি, অতঃপর যদি তোমাদের
কিতাবকে সত্যায়নকারীস্বরুপ তোমাদের কাছে কোন রাসূল আসেন, তখন তোমরা অবশ্যয় সে রাসুলের
প্রতি ঈমান আনবে এবং তাঁকে সাহায্য করবে। তিনি বললেন, তোমরা কি এ বিষয়ে অঙ্গীকার করেছ
এবং এই শর্তে আমার ওয়াদা গ্রহণ করে নিয়েছ? তারা বলল, আমরা অঙ্গীকার স্বীকার করেছি”
[ সূরা আল ইমরান, আয়াত ৮১]
পরবর্তী অংশ পড়ুন : মহানবী (সঃ) এর জন্ম ও বংশ পরিচয় ।
তথ্যের উৎস সমূহ:
১. আরব জাতির ইতিহাস - শেখ মুহাম্মদ লুৎফর রহমান ।
২. ইসলামের ইতিহাস - মোঃ মাহমুদুল হাছান
৩. ইসলামের ইতিহাস ডঃ সৈয়দ মাহমুদুল হক ।
১. আরব জাতির ইতিহাস - শেখ মুহাম্মদ লুৎফর রহমান ।
২. ইসলামের ইতিহাস - মোঃ মাহমুদুল হাছান
৩. ইসলামের ইতিহাস ডঃ সৈয়দ মাহমুদুল হক ।
৪. বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ব্লগের পোস্ট ।
0 মন্তব্যসমূহ