নাবাতিয়ান রাজ্য: উত্তর আরবের রাজ্যগুলির মধ্যে সর্বপ্রধান ছিল নাবাতিয়ান। নেবাতিয়ানগণ প্রথমে মেসোপটেমিয়া ও দক্ষিণ জেরুযালেমে বসতি স্থাপন করে। চতুর্থ খ্রিস্টপূর্ব শতাব্দীর মধ্যে উক্ত অঞ্চলের জনসাধারণের উপর প্রভাব বিস্তার করে। জর্দানের দক্ষিণ ও পশ্চিমে অবস্থিত ‘নেগেভ’ মরু অঞ্চলকে কেন্দ্র করে একটি শক্তিশালী রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। তাদের রাজধানী ছিল ‘রক্ত-গোলাপের শহর পেত্রা। উক্ত নগরীর ধ্বংসাবশেষ বর্তমান জর্দানের দক্ষিণ-পশ্চিমের গ্রাম ওয়াদি মুসা-র ঠিক পূর্বে হুর পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। রোমান সম্রাট ট্রাজান ১০৬ খ্রিস্টাব্দে অভিযান চালিয়ে নাবাতিয়ান রাজ্য দখল করে। ফলে এটি রোমান সাম্রাজ্যের প্রদেশে পরিণত হয়।
আরও পড়ুন : মহানবীর জন্ম ও বংশ পরিচয়
পালমিরা রাজ্য: খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে সিরীয় মরু অঞ্চলে এই রাজ্যটি গড়ে উঠে। এটি রোমান ও পারস্য সাম্রাজ্যের মধ্যস্থলে অবস্থান করে নিরপেক্ষভাবে উন্নতি লাভ করে। এই রাজ্যের পরক্রামশালী রাজা ছিলেন উজায়নাহ। তার প্রধান কৃতিত্ব ছিল- এশিয়া্ মাইনর, উত্তর আরব, সিরিয়া, মিসর ও আর্মেনিয়ায় স্বাীয় আধিপত্য বিস্তার করা। কিন্ত রোমান সম্রাট আরেলিয়ান ২৭২ খ্রিস্টাব্দে এই রাজ্য দখল করে এবং নির্মমভাবে পালমিরা ধ্বংস করে।
হিরা, গাস্বান ও কিন্দা রাজ্য: ৫৭০ বা ৫৭১ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ আরবের বিখ্যাত মারিব বাঁধ ধ্বংস করে কুখ্যাত খ্রিস্টান শাসক মক্কা আক্রমণকারী আবরাহা। এর ফলে ইয়ামেনের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙ্গে পড়ে। এবং দক্ষিণ আরব থেকে বহু গোত্র উত্তর আরবে হিজরত করে। তারা উত্তর আরবের উপর প্রভাব বিস্তার করে এবং কয়েকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। এই রাজ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- হিরা রাজ্য, গাস্বান রাজ্য এবং কিন্দা রাজ্য।
উল্লেখ্য, হিরা এবং গাস্বান রাজ্যের মধ্যে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক কারণে সম্পর্ক ভাল ছিল না। কারণ হিরারাজ্য পারসিকগণ কর্তৃক এবং গাস্বান রাজ্য রোমান কর্তৃক প্রভাবান্বিত ছিল। রোমান ও পারসিকদের চক্রান্তে হিরা ও গাস্বান রাজ্যের মধ্য অবিরত যুদ্ধ-বিগ্রহ লেগে থাকতো। অপরদিকে হিরা রাজ্যের মাধ্যমে আরব উপদ্বীপে পারস্যের প্রভাব বিস্তার ঘটে। কিন্দা রাজ্যও অনুরুপভাবে হিরা ও গাস্বান রাজ্যের সাথে যুদ্ধ-বিগ্রহে লেগে থাকতো। এমনকি গাস্বানরাজ্য কর্তৃক কিন্দা রাজ্য ধ্বংস প্রাপ্ত হয়।
আরও পড়তে পারেন: আবারাহার কাবা আক্রমণ
গাস্বান বংশের শেষ শাসক ৬৩৬ খ্রিস্টাব্দে ইয়ারমুকের যুদ্ধে রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াসের পক্ষে মুসলমানদের বিপক্ষে যুদ্ধ করেন। যদিও এই যুদ্ধের পরে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন কিন্তু হযরত উমর (রা)-এর ন্যিায়বিচারের মাধ্যমে তার শাস্তি হলে সে পুনরায় ইসলাম ত্যাগ করে। কিন্তু পরবর্তীতে এই রাজ্যসমূহ মুসলমান দ্বারা বিজিত হয় এবং ইসলামের সুশীতল ছায়ায় অধিকাংশ আরব আশ্রয় গ্রহণ করে।
উত্তর আরবের বেদুইন গোত্র এবং মক্কার নেতৃত্ব: কুযায়া, রাবী’য়া এবং মুযার এই তিনটি গোত্র হতে উত্তর আরবের গোত্রগুলির সৃষ্টি হয়। মুযার গোত্র থেকে কায়িস, কায়িস থেকে কুরাঈশ ও কিনানা বংশের উদ্ভব হয়। এই কুরাঈশ বংশের হতে মক্কার শাসনভার ন্যস্ত ছিল। ধারণা করা হয়, মহানবী (সঃ)- এর পূর্বপুরুষ “কুসাই” এর নামানুসারে কুরাইশ বংশের নামকরণ করা হয়। কুসাই এর পর যথাক্রমে আব্দে মানাফ, হাশিম, এবং সর্বশেষ মহানবী সাঃ-এর দাদা আব্দুল মুত্তালিব মক্কা শাসন করেন। আব্দুল মুত্তালিবের শাসনকালে আবিসিনিয়া ও ইয়ামেনের রাজা আবারাহা মক্কা আক্রমণ করে ব্যর্থ হয়।
পরবর্তী অংশ পড়ুন : প্রাক ইসলামী আরবের ভৌগলিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা ।
তথ্যের উৎস সমূহ:
১. আরব জাতির ইতিহাস - শেখ মুহাম্মদ লুৎফর রহমান ।
২. ইসলামের ইতিহাস - হাসান আলী চৌধুরী
৩. ইসলামের ইতিহাস ডঃ সৈয়দ মাহমুদুল হক ।
৪. বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ব্লগের পোস্ট ।
0 মন্তব্যসমূহ