৫৫০ খ্রিস্টাব্দে কার্যত বাংলায় গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। সম্ভবত ৬০৬ খ্রিস্টাব্দে শশাঙ্ক পরবর্তী দুর্বল ও নামমেমাত্র গুপ্তশাসকদের হাত থেকে গৌড় মুক্ত করে গৌড়ের সিংহাসনে আরোহণ করেন। এবং নিজেকে গৌড়ের স্বাধীন রাজা হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি প্রাচীন বাংলার জনপদ গুলোকে গৌড় নামে একত্রিত করেন। প্রাচীন গৌড় নগরীর অংশবিশেষ বর্তমান বাংলাদেশের চাপাইনবাবগন্জ জেলায় অবস্থিত। শশাঙ্কের উপাধী ছিল রাজাধিরাজ। তিনি ছিলেন বাংলার প্রথম স্বাধীন ও সার্বভৌম রাজা। শশাঙ্ক রাজধানী স্থাপন করেন কর্ণসুবর্ণে। এটি বর্তমান ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলায় অবস্থিত।
![]() |
গৌড় রাজ্য |
আরও পড়ুন:বাঙ্গালি জাতীর উৎপত্তির ইতিহাস
এর পর শশাঙ্ক পশ্চিম সীমান্তে রাজ্য বিস্তারের নীতি গ্রহণ করেন এবং কনৌজের মুখরীদের সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হন। উল্লেখ্য, এই সময় থানেশ্বরের শক্তিশালী রাজা প্রভাকর বর্ধনের কন্যা রাজ্যশ্রীর সাথে কনৌজের মৌখরী রাজা গ্রহবর্মনের বিবাহ হলে কনৌজ- থানেশ্বর জোট গড়ে উঠে। এবং এই জোটকে হুমকি হিসেবে দেখে শশাঙ্ক মালবের রাজা দেবগুপ্তের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করেন। মালবের সঙ্গে আবার থানেশ্বরের ঘোর বিরোধ ছিল। ইতিমধ্যে থানেশ্বর-কনৌজ জোটের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে শশাঙ্ক ও দেবগুপ্ত কেনৌজ আক্রমণ করে মুখরী রাজা গ্রহবর্মণকে হত্যা করে এবং তার স্ত্রী রাজ্যশ্রীকে বন্দী করে। এ সময় প্রভাকর বর্ধনের জৈষ্ঠ পুত্র রাজ্যবর্ধন থানেশ্বরের সিংহাসনে বসে ভগ্নী রাজ্যশ্রীকে উদ্ধারের জন্য বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে কনৌজের দিকে অগ্রসর হন।
![]() |
শশাঙ্কের যুদ্ধ |
আরও পড়ুন:বাংলায় সেন রাজবংশের পতন ও মুসলিম শাসনের উত্থান।
অতঃপর হর্ষবর্ধন কামরুপ রাজ ভাস্করবর্মণের সাথে মিত্রতায় আবদ্ধ হয়ে বাংলায় প্রবেশ করে। ইুতপূর্বে সম্রাট হর্ষবর্ধন মালব বাহিনীকে পরাজিত করেছিল। অতঃপর হর্ষবর্ধনের সেনাবাহিনীর কিছু অংশ ভাস্করবর্মণের সাথে যোগ দিলে মিত্রবাহিনীর শক্তি আরও বৃদ্ধি পাই। এই বিশাল বাহিনীর সাথে শশাঙ্কের কোন স্থানে যুদ্ধ হয়েছিল তা বলাটা মুস্কিল হলেও চৈনিক বিবরণী মতে, এই যুদ্ধে শশাঙ্ক পরাজিত ও সম্ভবত নিহত হন। এবং শশাঙ্কের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ ভাস্করবর্মন ও হর্ষবর্ধনের বিজয়ী বাহিনী দ্বারা অধিকৃত হয়।
তবে কারও কারও মতে, পূর্বে কামরুপ ও পশ্চিমে থানেশ্বর শক্তি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে কনৌজ থেকে পালাতে বাধ্য হয় শশাঙ্ক। এরপর ৬৩৭ খ্রি. তার মৃত্যু পর্যন্ত তিনি গৌডের শাসক ছিলেন। শশাঙ্কের মৃত্যুর পর তার পুত্র মানবদেবকে পরাজিত করে হর্ষবর্ধন ও ভাস্কর বর্মন গৌড়দেশ অধিকার করে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। ফলে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য আবারও অস্তমিত হয়ে যায়।
0 মন্তব্যসমূহ