আরব জাতির উৎপত্তি ও নামকরণ |

           
মহাপ্লাবনের পরবর্তী কালের কথা। হযরত নূহ আঃএর চার পুত্র- সাম, হাম, ইয়াফাস এবং রাফাজের বংশধরগণ কালক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং সেমিটিক, হ্যামিটিকি আর্য সভ্যতার বিকাশ ঘটায়। ধারণা করা হয়, সেমিটিকগণ আরব, হ্যামিটিকিগণ আফ্রিকায় বসতি স্থাপন করে এবং বাকি মানবসম্প্রদায় ইয়াফাসের বংশধর। উল্লেখ্য, রাফাজের বংশধর সম্পর্কে প্রামণ্য ইতিহাস দুর্লভ।

সেমিটিকগণ আরবদেশ এবং কালক্রমে দাজলা ফোরাতের অববাহিকা অঞ্চলে যথাক্রমে ব্যবিলন তথা সুমরেীয় আক্কাদীয়, আমুরীয়, আসিরিয়, ক্যালদীয়, ফেনেসীয় এবং হিব্রæ সভ্যতার সৃষ্টি করে। মানবসভ্যতার ইতিহাসে সেমিটিক জাতির অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। এমনকি হযরত মুসা আঃ, ঈসা আঃ এবং ইসলামের শেষনবী মুহাম্মদ সঃ এই সেমিটিক জাতির অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, আরব দেশ সেমিটিক জাতির আদিভূমি ছিল। একেশ^রবাদী ধর্ম যেমন : খ্রিস্ট ধর্ম ইহুদি ধর্ম এবং ইসলাম ধর্ম প্রচারেও সেমিটিক জাতি নেতৃত্ব দান করেছে। পরবর্তীতে এই সেমিটিক জাতি থেকে আরবে বিভিন্ন জাতি এবং রাজ্যের আবির্ভাব ঘটে।

আরও পড়ুন: মহানবীর (স) আবির্ভাব।

মুসলমান ঐতিহাসিকগণ আরবজাতিকে তিনটি স্তরে ভাগ করেছেন। যথা:                    

. আরব আল বায়দা বা দূরবর্তী আরব : পবিত্র কুরআনে বর্ণিত প্রখ্যাত প্রাচীন বংশ আদ, সামুদ, তাসম জাদীস প্রভৃতি এই জাতির শ্রেণীভুক্ত। বর্তমানে তাদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত।

. আরব আল আরিবা বা আসল আরব : আসল আরব কাহাতানের বংশধর। কাহতানের দুইপুত্র জারহাম ইয়ারব উল্লেখ্য, কাহাতানের পুত্র ইয়ারাবের নাম অনুসারে আরব নামটির উৎপত্তি হয়েছে এবং আরব জাতি সেই নামে পরিচিত লাভ করেছে। কাহাতান বংশের উত্থানের মাধ্যমে আরব জাতির প্রকৃত ইতিহাসের সূত্রপাত হয়। তার বংশধরগণ মহানবীর সঃ এর জন্মের ৭০ বছর পূর্ব পর্যন্ত ইয়ামেনে শাসনকার্য পরিচালনা করে।

. মুস্তারিবা বা বহিরাগত আরব : হযরত ইব্রাহীম আঃ সিরিয়ার নিকটবর্তী শহর বাবেলের অধিবাসী ছিলেন। তাঁর পুত্র হযরত ইসমাইল আঃ এর বংশধর আদনান মোস্তারিবা গোত্রের প্রতিষ্ঠিতা ছিলেন। উল্লেখ্য, হেজাজ, নজদ, পেত্রা, পালমিরা অঞ্চলে বসবাসকারী মুস্তারিবা গোত্রের নিযারী হতে মুহাম্মদ সঃ এর কুরাইশ বংশের উদ্ভব হয়। অন্যভাবে, ইসমাইল আঃ এর ৫৮ তম অধঃস্তন পুরুষ আল ফিহরের অন্যনাম ছিল কোরেশ সেই নাম থেকেকোরাইশ বংশ নামের উৎপত্তি।

আবার ভূ-প্রকৃতির তারতম্য অনুসাওে আরবের অধিবাসীদের দুই শেণীতে বিভক্ত করা যায়। প্রথমত, শহরের স্থায়ী বাসিন্দা, যারা উর্বর তৃণ অঞ্চলগুলোতে জনপদ গড়ে তুলে স্থায়ীভাবে বসবাস করে। তারা কৃষিকার্য, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতি করে জীবীকা নির্বাহ করত। বহির্বিশে^ সঙ্গে যোগাগের ফলে তারা মরুবাসী বেদুঈনদের চেয়ে অধিকতর রুচিসম্পন্ন মার্জিত।

আরও পড়ুন : খন্দকের যুদ্ধে বেদুইনদের পরাজয়

দ্বিতীয়ত, মরুবাসী যাযাবর বেদুঈন, তারা ছিল স্বাধীনচেতা বেপরোয়া দুর্ধর্ষ অধিবাসী। তারা শহরে স্থায়ীভাবে বসবাসের পরিবর্তে মরুভূমিতে সর্বত্রে ঘুরে বেড়াত এবং তৃণের সন্ধানে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমন করত। তাদের অন্যতম পেশা ছিল শহরের স্থায়ী বাসিন্দাদের ধন-সম্পদ লুণ্ঠন করা। তাই শহরবাসী মরুবাসী বেদুঈনদের মধ্যে আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।

এই বেদুঈনদের মধ্যে অন্যতম ছিল উত্তর আরবের বেদুইন গোত্র সমূহ। আদনান গ্রোত্র হতে উৎপত্তি হয় কুযায়া, রাবীয়া এবং মুয়ায গোত্র। এই তিনটি গোত্র হতে উত্তর আরবের গোত্রগুলির সৃষ্টি হয়। উক্ত তিনটি গোত্র কালক্রমে অসংখ্য গ্রোত্রে বিভক্ত হয়ে পৃথক পৃথক এলাকায় স্বাধীনভাবে অথচ পরস্পরের সাথে বিবাদ বিসংবাদ নিয়ে বসবাস করত।

এখানে কুয়াযের গোত্রের শাখা গুলো নজদের উত্তরে বসবাস করতো। মুয়ায রাবিয়া গোত্রের শাখাগুলো মক্কার তার আশেপাশে বসতি বিস্তার করে। তাই এই গোত্রগুলোর মধ্যে যুদ্ধ বিগ্রহ লেগে থাকতো। উল্লেখ্য, মুয়ায গোত্র থেকে কায়িস, কায়িস থেকে কুরাঈশ কিনানা এবং কুরাঈশ থেকে উমাইয়া হাশিম গোত্রের উদ্ভব হয়। এই হাশিম গোত্রে বিশ^ মানবতার মুক্তির দূত, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মহামানব ইসলামের শ্রেষ্ট সর্বশেষ নবী মহানবী হযরত মুহাম্মদ সঃ জন্মগ্রহণ করেন

পরবর্তী অংশ পড়ুন : দক্ষিণ আরবের প্রাচীন রাজ্যসমূহের পরিচিতি ।

তথ্যের উৎস সমূহ:

১. আরব জাতির ইতিহাস - শেখ মুহাম্মদ লুৎফর রহমান ।

২. ইসলামের ইতিহাস - মোঃ মাহমুদুল হাছান 

৩. ইসলামের ইতিহাস  ডঃ সৈয়দ মাহমুদুল হক ।

৪. বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ব্লগের পোস্ট ।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ