এই রাজ্যগুলি বাংলা এবং বাংলার আশেপাশে স্থাপিত হয়েছিল। মগধের রাজ জরাসন্ধ পরাক্রমশালী নৃপতি ছিলেন। কালক্রমে মগধকে কেন্দ্র করেই ভারতে প্রথম সাম্রাজ্যের অভ্যুদয় হয়। মগধ সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল রাজগৃহ, যা বর্তমানে রাজগীর নামে সুপরিচিত এবং ভারতের বিহার রাজ্যের নালন্দা জেলার একটি শহর।
![]() |
মগধ ম্যাপ |
আরও পড়ুন:প্রাচীন বাংলার জনপদসমূহ
মগধের নন্দ বংশীয় শেষ রাজা ধননন্দ ছিলেন অত্যাচারী শাসক। তাকে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য খ্রিস্টপূর্ব ৩২১ অব্দে পরাজিত করে, মগধ দখল করে। এর পর চন্দগুপ্ত শুধুমাত্র গ্রিকদের আক্রমণ প্রতিহত করেন নি, বরং তিনি আলেকজান্ডারের সেনাপতি সেলিউকসকে পরাজিত করে উপমহাদেশ থেকে গ্রিকদের বিতাড়িত করেন।
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য খ্রিস্টপূর্ব ৩২১ অব্দে মগধের সিংহাসনে আরোহণের মাধ্যমে ভারতে মৌর্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এই মৌর্য সাম্রাজ্য ছিল ভারতের প্রথম সাম্রাজ্য। এই সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল পাটালিপুত্র। পরবর্তীকালে শক্তিশালী গুপ্ত সাম্রাজ্য ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তরাংশে, বাংলাদেশ ও সম্ভবত পাকিস্তানের কিছু অংশেও বিস্তার লাভ করেছিল।
![]() |
মৌর্য সাম্রাজ্য |
আরও পড়ুন:বাঙ্গালি জাতীর উৎপত্তির ইতিহাস
সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে উত্তর বাংলায় মৌর্য শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। এবং এই অঞ্চলটি মৌর্য সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশে পরিণত হয়। প্রাচীন পুন্ড্রনগর ছিল এ প্রদেশের রাজধানী। উত্তর বঙ্গ ছাড়াও মৌর্য শাসন কর্ণসুবর্ণ, তাম্রলিপ্ত ও সমতট অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে, ঐ সময়ে মগধ এবং গঙ্গারিডই মিলে একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠিত হয়।
খ্রিস্টপূর্ব ২৭৩ থেকে ২৩২ অব্দে অশোকের মৃত্যু পর্যন্ত ৪০ বছর তিনি ভারবর্ষে রাজত্ব করেন। তবে তার মৃত্যুর পর মৌর্যবংশ দুর্বল হতে থাকে। এই সাম্রাজ্যের পতনের পর শুঙ্গ ও পরে কম্ব বংশের আবির্ভাব ঘটে। ধারণা করা হয়, তারা কিছু ছোট অঞ্চলের উপর শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল। এরপর বেশ কিছু বিদেশি শক্তি। ভারতবর্ষ আক্রমণ করে। এদের মধ্যে আছে গ্রিক, শক, পল্হব, কুষাণ প্রভৃতি অন্যতম। তবে এ আক্রমণকারীরা বাংলা পর্যন্ত এসেছিল কিনা তা বলা যায় না। কিছু কিছু ঐতিহাসিকদের মতে, মৌর্যদের পর ভারতে তুলনামুলক ভাবে শক্তিশালী কুষাণ সাম্রাজ্য গঠিত হয়েছিল। এই সাম্রাজ্য উত্তর ও পশ্চিম বঙ্গ দখল করেছিল।
![]() |
কুষাণ সাম্রাজ্য |
আরও পড়ুন:বাংলার প্রথম স্বাধীন নৃপতি রাজা শশাংকের উত্থান ও পতন ।
উল্লেখ্য, কুষাণ সাম্রাজ্যের পতনের যুগ হতে গুপ্ত সাম্রাজ্যের অভ্যুদয়ের যুগ পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করা কঠিন। কুষাণ সাম্রাজ্যের পতনের পর সমগ্র ভারতে বহুসংখ্যক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যের উদ্ভব হয়। বাংলাদেশেও এইরকম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যের অস্তিস্তের কথা বিক্ষিপ্তভাবে জানা যায়। কুষাণ সাম্রাজ্যের পতনের প্রায় ১০০ বছর পর ভারতে গুপ্ত যুগের সূচনা হয়। প্রকৃতপক্ষে, আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণকালের পর থেকে গুপ্তযুগ সূচনা পর্যন্ত বাংলার ইতিহাস এখনও অন্ধকার আচ্ছন্ন। তবে গুপ্ত যুগ থেকে বাংলার ইতিহাস তার নিজেস্ব ধারায় প্রবাহিত হয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ